শিশুর নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

শিশুর নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার এবং নিউমোনিয়া রোগের প্রতিকার সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলে আলোচনা করা হয়ছে। আপনার শিশু যদি নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে, তাহলে আজকের আর্টিকেলটি শুধু মাত্র আপনার জন্য।
শিশুর নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
সেই সাথে আজকের আর্টিকেলে নিউমোনিয়া রোগ সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য আলোচনা করা হয়েছে। সুতরাং সময় ক্ষেপন না করে আর্টিকেলটি বিস্তারিত ভাবে পড়ুন।.

শিশুর নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার 

নিউমোনিয়া হল ফুসফুসের এক ধরনের সংক্রামণ। যা মূলত ছত্রাক বা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্টি হয়ে থাকে। আর এই নিউমোনিয়ায় মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে আমাদের দেশে প্রতি বছর প্রায় এক লক্ষ শিশু মারা যায়। আর এদের মধ্যে এর মধ্যে ২৪ হাজারের (২৪ শতাংশ) মৃত্যু হয় শুধু নিউমোনিয়ার জন্য।

মূলত শীতের সময়ে শিশুদের ঠান্ডা জনিত রোগ বেশি হয়ে থাকে। বিশেষ করে সর্দি, কাশি, জ্বর, শ্বাস-কষ্ট, নিউমোনিয়া। আর এসব রোগের মধ্যে নিয়মোনিয়া রোগটি হল একটি মারাত্মক রোগ। আর এ রোগ যে কোনো বয়সেই হয়ে থাকে। তবে বিশেষ করে শিশুদের এই নিউমোনিয়া রোগ বেশি হয়ে থাকে। আর এই নিয়মোনিয়া হলে শিশুদের ফুসফুস মারাত্মক সংক্রামনের শিকার হতে পারে।।
আজকের আর্টিকেলে শিশুর নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সহ নিয়মোনিয়া রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে বিভিন্ন তথ্য আলোচনা করা হয়েছে। সুতরাং নিউমোনিয়া রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে, আজকের আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ ভাবে পড়ুন।

নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ

শিশুর নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলে বিভিন্ন তথ্য আলোচনা করা হয়েছে। সর্বপ্রথমে এই নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ সম্পর্কে আলোচনা করা হল-
ঠান্ডা জনিত রোগ নিউমোনিয়ার অন্যতম উপসর্গ।।
  • উচ্চ মাত্রার জ্বর।
  • কাশি হওয়া।
  • দুর্বলতা বা ক্লান্তি অনুভব হওয়া।
  • দ্রুত হৃদস্পন্দন হওয়া।
  • নিঃশ্বাসের দুর্বলতা।
  • অতি দ্রুত বা ঘন ঘন শ্বাস-প্রশ্বাস।
  • শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার সময়ে বুকের ভিতরে ঘর ঘর আওয়াজ হতে পারে।
  • শরীর ঘামানো।
  • বুকে ব্যথা হওয়া।
  • পেট ব্যথা হওয়া।
  • তিন সপ্তাহের বেশি কাঁশি থাকা।
  • কাঁশির সাথে রক্ত বের হওয়া।
  • খাবারের প্রতি অনিহা।
  • মানসিক অবস্থার পরিবর্তন।
  • নীলাভ ত্বক।
  • বাচ্চাদের ক্ষত্রে কান্নার পরিমান বৃদ্ধি পাওয়া।
  • প্রস্রাব কমে যাওয়া।
  • ত্বক ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া।
  • ফ্যাকাসে নীল শিরার দাগ দেখা দেয়।
  • নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ গুলোর মধ্যে এগুলোই অন্যতম।

নিউমোনিয়া রোগের প্রতিকার

নিউমোনিয়া রোগ প্রতিরোধ করার সবচেয়ে কার্যকর উপায় গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি উপায় হল ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিশেধক টিকা গ্রহণ করা। একই সাথে প্রতিদিন স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করা বা সতর্কতা অবলম্বন করা যা নিউমোনিয়ার মতো প্রাণ ঘাতি রোগ হওয়ার সম্ভাবনাকে আরও কমিয়ে আনে।
ঠান্ডা জনিত রোগ সর্দি কাশি মানেই কিন্তু নিউমোনিয়া রোগ নয়। সাধারণত সর্দি কাশি হলে অ্যান্টিবায়োটিক গালেনা। কিন্তু অনেক সময় অ্যান্টিবায়োটিক কিনে শিশুকে খাওয়ান। যা শিশুর জন্য খুবই ক্ষতিকর। কেননা এর জন্য পরবর্তী সময়ে অ্যান্টিবায়োটিক আর সঠিক ভাবে কাজ করে না। তাই আপনার শিশুর যদি জ্বর, সর্দি, কাশি হয় তাহলে অস্তির হবেন না। নিউমোনিয়া রোগের প্রতিকার গুলো হল-
  • সাধারনত শিশুর জ্বর হলে প্রথমে প্যারাসিটামল খাইয়ে দিতে পারেন।
  • নরম কাপড় ভিজিয়ে আপনার বাচ্চার পুরো শরীর ভালো করে মুছে দিন।
  • শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে সমস্যা হলে বা নাক বন্ধ হয়ে গেলে লবণ পানির ড্রপ দিয়ে নাক পরিষ্কার করে দিতে পারেন। এই ড্রপ ফার্মেসিতে পেয়ে যাবেন।
  • শিশুকে অবশ্যই কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করাতে হবে।
  • সাধরনত সামান্য কাশি হলেই ঔষধ খাওয়াবেনা। আপনার শিশুর বয়স ছয় মাসের বেশি হলে কুসুম গরম পানি, মধু, লেবু অথবা তুলসী পাতার রসে মধু মিশ্রণ করে খাওয়াতে পারেন।
  • অনেকে মনে করেন কলা বা অন্য ফল খেলে ঠান্ডা লাগে এ ধারনাটি সম্পূর্ণ ভুল।
  • ঘরের দরজা জালানা খুলে রাখুন যাতে ঘরে পর্যাপ্ত পরিমান আলো বাতাস আসে।
  • আপনার বাচ্চাকে বারবার বুকের দুধ খাওয়াতে হবে।
হাসপাতালে নেওয়ার সময়-
  • শিশু যদি নিস্তেজ হয়ে যেতে থাকলে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
  • খিঁচুনি হলে।।
  • খেতে না পারলে।
  • হাত পা নীল রঙের হয়ে গেলে।।
  • কোনো ভাবেই কান্না থামাতে না পারলে। সুতরাং এসব লক্ষণ আপনার শিশুর মাঝে দেখা দিলে দ্রুত আপনার শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে অথবা একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
নিউমোনিয়া রোগ হলে যেসব জটিলতা দেখা দিতে পারে
  • ফুসফুসের কার্যকারিতা কমে যায়।
  • হৃৎপিণ্ডের কার্যক্ষমতা হ্রাস পায়।
  • অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
  • শিশুর নিউমোনিয়া রোগ প্রতিরোধ
শিশুর নিউমোনিয়া রোগ প্রতিরোধ করার উপায় হল-
  • নবজাতকের জন্মের পরে মায়ের বুকের শালদুধ খাওয়াতে হতে হবে।
  • শিশুকে শুধু ছয় মাস পর্যন্ত শুধু মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে।
  • কৌটার দুধ খাওয়ানো যাবেনা। তবে মায়ের দুধ একেবারে না পেলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।
  • ছয় মাস পর থেকে মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি বাড়িতে তৈরি অন্যান্য সুষম খাবার খাওয়াতে হবে।
  • শিশুকে সবুজ শাক-সবজি ও ফলমূল খাওয়ানোর অভ্যাস করুন।
  • শিশুর ভিটামিনের অভাব যেন না হয়।
  • বর্তমান সময়ে চলমান টিকাদান কর্মসূচীর আওতাধীন টিকাগুলো (বিসিজি, ডিপিটি, নিউমোনিয়া ও হাম) শিশুকে অবশ্যই দিতে হবে।

নিউমোনিয়া রোগের ঝুঁকিতে যে সব শিশু

  • যে সকল নবজাতকের জন্মের পরে শাল দুধ খাওয়ানো হয়নি।
  • মায়ের বুকের দুধের পরিবর্তে যে সকল নবজাতককে কোউটার দুধ খাওয়ানো হয়।
  • পুষ্টিহীনতায় যে সকল শিশু ভুগে থাকে।
  • যেসকল শিশুর ভিটামিন-এ এর অভাব রয়েছে।
  • জন্মগত ভাবে যেসকল শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হয়ে থাকে।
  • যেসকল শিশু হাম রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে।
  • বর্তমান সময়ে চলমান টিকাদান কর্মসূচীর আওতাধীন টিকাগুলো (বিসিজি, ডিপিটি, নিউমোনিয়া ও হাম) যেসকল শিশুকে দেওয়া হয়নি। নিউমোনিয়া রোগের ঝুঁকিতে যে সব শিশু ।

শেষ কথা- শিশুর নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার

প্রিয় পাঠক, আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে ইতিমধ্যে শিশুর নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গুলো জেনে গেছেন। সুতরাং আপনার শিশুর যদি নিউমোনিয়ার মতো মারাত্ম রোগের লক্ষণ দেখা দিয়ে থাকে, তাহলে দেরি না করে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
আজকের আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনি যদি উপকৃত হয়ে থাকেন, তাহলে অনুগ্রহ করে আপনার পরিচিতদের মাঝে শেয়ার করুন। সেই সাথে আজকের আর্টিকেলে বর্ণিত কোনো তথ্য আপনার কাছে ভুল প্রমাণিত হলে, অনুগ্রহ করে সঠিক তথ্য প্রমাণ সহ আমাদের সাথে যোগা যোগ করবেন।

আর এরকম নিত্য নতুন বিভিন্ন ধরনের তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইট www.kanon24.com নিয়মিত ভিজিট করুন। এতোক্ষণ আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে আমাদের আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

কানন২৪ এর নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন।প্রতিটি মন্তব্যের জবাব দেওয়া হয়;

comment url