বিনা অপারেশনে নাকের পলিপাস এর ঘরোয়া চিকিৎসা-নাকের পলিপাস এর ছবি
নাকের পলিপাস এর ঘরোয়া চিকিৎসা এবং নাকের পলিপাস হলে কি কি সমস্যা হয় এ সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলে বিস্তারিত বিভিন্ন তথ্য আলোচনা করা হয়েছে। আপনি যদি পলিপাসের মতো সমস্যায় ভুগে থাকেন, তাহলে আজকের আর্টিকেলটি শুধু মাত্র আপনার জন্য।
সেই সাথে আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আরও জানতে পারবেন পলিপাস হওয়া কারন, লক্ষণ, অপারেশন ছাড়া পলিপাস ভালো হয় কিনা এ সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য। সুতরাং সময় ক্ষেপন না করে আর্টিকেলটি বিস্তারিত ভাবে পড়ুন।.
নাকের পলিপাস এর ঘরোয়া চিকিৎসা
সর্দি, কাশির মতো পলিপাসও একটি ঠাণ্ডা জনিত সাধারন রোগ। কিন্তু এ রোগের লক্ষণ গুলো বুঝতে পারা মাত্রই এর থেকে পরিত্রাণের জন্য চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। তা নাহলে ঘটতে পারে বিভিন্ন সমস্যা। পলিপাস মূলত নাকের দীর্ঘ মেয়াদী অ্যালার্জির ফল। ঘন ঘন সর্দি বা ঠান্ডার কারনের নাকের ভেতরের মিউকাস মেমব্রেনে নরম হয়।
সেই সাথে ব্যথাহীন ও হয়ে যায়। মূলত আঙুলের মতো নন ক্যানসেরাস বৃদ্ধিই হল পলিপাস। প্রথমে এই পলিপাস মটরশুঁটির মতো থাকে কিন্তু এর সঠিক চিকিৎসা না করালে ধীরে ধীরে এটি নাকের ছিদ্র বন্দ করে দেয়। ফলে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে কষ্ট হয় অর্থাৎ শ্বাসকষ্টের সমস্যা হয়। আবার অনেক সময় নাক দিয়ে রক্তপাত হতে পারে।
এছাড়াও পলিপাস হলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মূখীন হতে হয়। তাই পলিপাস থেকে মুক্তি লাভের জন্য আজকের আর্টিকেলে নাকের পলিপাস এর ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। সুতরাং আপনি যদি পলিপাস নির্মুল করতে চান, তাহলে আজকের আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ুন।
যোগ ব্যয়াম: নাকের পলিপাস এর ঘরোয়া চিকিৎসা গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি চিকিৎসা হল যোগ ব্যয়াম বা নিঃশ্বাসের ব্যয়াম। সুতরাং আপনি যদি পলিপাস মুক্ত থাকতে চান, তাহলে নিয়মিত প্রতিদিন নিঃশ্বাসের ব্যয়াম করুন।
নাক পরিষ্কার করা: পলিপাস ভালো করার জন্য নিয়মিত প্রতিদিন নাকের ভিতরে পরিষ্কার করুন। নাক পরিষ্কার করার জন্য প্রথমে আপনাকে গরম পানি সামান্য লবণ মিশ্রণ করে নিতে হবে। এরপরে লবণ মিশ্রিত পানি দিয়ে নাকের ভিতরে পরিষ্কার করুন।
এলার্জী জাতীয় খাবার না খাওয়া: নাকের পলিপাস এর ঘরোয়া চিকিৎসা গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি চিকিৎসা হল পলিপাস হওয়ার অন্যতম প্রধান কারন গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি কারন হল এলার্জীর সমস্যা। সুতরাং পলিপাস ভালো করতে চাইলে সর্ব প্রথমে এলার্জি জাতীয় সকল খাবার বর্জন করুন।
গরম পানি ব্যবহার: পলিপাস দূর করার জন্য প্রতিদিন নিয়মিত গরম পানির তাপ নিন।
পানি পান: নাকের পলিপাস এর ঘরোয়া চিকিৎসা গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি চিকিৎসা হল প্রতিদিন নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমান পানি পান করুন। যাতে করে শরীর আদ্রতা বজায় থাকে।
ভিনেগার সেবন: নাকের পলিপাস দূর করার জন্য প্রতিদিন দুই থেকে তিন বার পানির সাথে সামান্য পরিমান ভিনেগার মিশ্রণ করে পান করুন।
নাকের পলিপাস হলে কি কি সমস্যা হয়
নাকে পলিপাস হওয়ার অন্যতম প্রধান কারন হল এলার্জীর সমস্যা। এ সমস্যা থকলে নাকে পলিপাস হওয়ার সম্ভাবনাও অনেক বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও ধূলাবালি, ধোঁয়া, রাসায়নিক পদার্থ সহ বিভিন্ন কারনে পলিপাস হয়ে থাকে। তাহলে চলুন জেনে নিই নাকের পলিপাস হলে কি কি সমস্যা হয় এ সম্পর্কে বিস্তারিত-
- একটানা এক সপ্তাহের বেশি নাক বন্ধ হয়ে থাকতে পারে।
- শ্বাস-প্রশ্বাস জনিত সমস্যা।
- প্রচন্ড মুখ ও মাথা ব্যথা হয়ে থাকে।
- উপরের চোয়ালে ব্যথা অনুভুত হওয়া।
- মাথা ভারী হয়ে থাকে এবং চোখ মুখ ফুলে থাকে।
- অনেক সময় নাক দিয়ে রক্ত ক্ষরণ ও হয়ে থাকে।
- ঘুমানোর সময় নাক ডাকার সমস্যা।
- ঘ্রানশক্ত কমে যাওয়া।
- আবার অনেক সময় নাক দিয়ে কোনো ঘ্রান নাও পেতে পারেন।
- পোস্টন্যাসাল ড্রিপ।
- এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে।
পলিপাসের প্রকার ভেদ
পলিপাসের প্রকার ভেদ গুলো হল-
- সাধারণ মিউকাস পলিপাস।
- ফাংগাল পলিপাস।
- নেওপ্লাস্টিক পলিপাস।
নাকের পলিপাস এর লক্ষণ
- এলার্জীর জন্য বিশেষ করে বেশি পলিপাসের সমস্যা হতে পারে।
- ঘন ঘন হাঁচি হওয়া।
- ঠাণ্ডা লেগে থাকা।
- ঘুমের মধ্যে শ্বাস কষ্ট হওয়া।
- নাক দিয়ে অনবরত পানি ঝরতে থাকা বা সর্দি লাগা।
- নাকের ঘ্রান শক্তি হ্রাস পাওয়া।
- নাকের একদিকে কিংবা দুইদিকে আঙ্গুরের মতো কিছু একটা ঝুলে থাকা।।
- কানে কম শুনা কিংবা কান বন্ধ হয়ে যাওয়া।
- মাসের যেকোনো সময়ে ঠান্ডা জনিত সমস্যা বিশেষ করে সর্দি, জ্বর হওয়া।
- ঘন ঘন সর্দি হলে জ্বর হলে এ সময় হাঁছি দিলে চোখ নাক দিয়ে পানি বের হওয়া।
- নাক ডাকার অভ্যাস থাকলে নাকে পলিপাস হতে পারে।
- নাকে বিভিন্ন ধরনের জীবনা বা ময়লা জমলে পলিপাস হতে পারে।
- সর্দি লেগে যদি পুঁজ হয় তাহলেও পলিপাস হতে পারে।
- নাকের বায়ুথলি থেকেও পলিপাস হয়ে থাকে।
- ধোয়া, ধূলাবালি ও ফুলের ফেনুর মধ্যে থাকলে পলিপাস হতে পারে।
- মূলত নাকের পলিপাস এর লক্ষণ এগুলোই। কিন্তু এগুলো ছাড়াও বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে।
নাকের পলিপাস এর ছবি
বিনা অপারেশনে নাকের পলিপাস চিকিৎসা
নাকের পলিপাস কোনো তেমন জটিল রোগ নয়। পলিপাস যদি আপনি প্রাথমিক অবস্থায় নির্ণয় করতে পারেন, তাহলে আপনার নাকের পলিপাস বিনা অপারেশনে ঘরোয়া পদ্ধতিতে ভালো করা সম্ভব। কিন্তু আপনার অবস্থা যদি জটিল হলে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তবেই পরবর্তি সিন্ধান্ত গ্রহন করবেন।
বিনা অপারেশনে নাকের পলিপাস চিকিৎসা হল-
আদা: আদাকে বলা হয়ে থাকে সকল রোগের দাদা। কেননা আদাতে বিদ্যমান রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভেষজ গুণাগুণ। সুতরাং আপনি যদি আপনার নাকের পলিপাস দূর করতে চান, তাহলে আপনার খাদ্যতালিকায় রাখতে পারেন আদা। এছাড়াও আদার রস পান করতে পারে, চা এ আদা ব্যবহার করে পান করতে পারেন।
রসুন: পলিপাস দূর করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে রসুন। এর জন্য আপনাকে প্রথমে কুসুম গরম পানি নিতে হবে। এরপরে রসুন পেস্ট গুলো দিয়ে পানির সাথে মিশ্রণ করে নিন। এরপরে পানিটি ছেঁকে পান করুন। এতে আপনার পলিপাস দ্রুত দূর হয়ে যাবে।
হলুদ: হলুদ পলিপাস দূর করতে সহায়তা করে থাকে। সুতরাং আপনি যদি পলিপাসের সমস্যায় ভ্যগে থাকেন, তাহলে নিয়মিত হলুদ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এতে করে দ্রুতই আপনার পলিপাস দূর হয়ে যাবে।
নাকের পলিপাস এর ড্রপ এর নাম
প্রথমিক পর্যায়ে নাক বন্ধ হলে বা অন্য কোনো সমস্যার সম্মূখীন হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নিচে বর্ণিত ড্রপ গুলো ব্যবহার করতে পারেন। নাকের পলিপাস এর ড্রপ এর নাম গুলো হল-
- Oxynex Nasal Drop
- Budesonide
- Xylocon Nasal Drop
- Fluticasone
- Flona Spray
- Mometasone
- Fson Nasal Spray
নাকের পলিপাস কিভাবে ভালো হয়?
নাকের পলিপাস কিভাবে ভালো হয় এ সম্পর্কে ইতিমধ্যে আজকের আর্টিকেলের উপরের অংশে বিস্তারিত ভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। অনুগ্রহ করে পড়ে নিবেন।
নাকের পলিপাস কি অপারেশন ছাড়া নিরাময় করা যায়?
কের পলিপাস কি অপারেশন ছাড়া নিরাময় করা যায়- হ্যাঁ অবশ্যই। তবে আপনার অবস্থা যদি জটিল হয়ে থাকে, তাহলে অপারেশন করতে হবে।
নাকের পলিপাস থেকে কি ক্যান্সার হয়?
নাকের পলিপাস থেকে কি ক্যান্সার হয়- না। তবে আপনার পলিপাসে দীর্ঘদিন যদি ইনফেকশন থাকে আর আপনি যদি সঠিক চিকিৎসা না করান, তাহলে ক্যান্সারের মতো জটিলতা হতে পারে।
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক, আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে ইতিমধ্যে নাকের পলিপাস এর ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জেনেছেন। সুতরাং আপনার পলিপাস নির্মুলে উপরের নিয়ম গুলো মেনে চলতে পারেন। আর আপনার অবস্থা যদি খারাপ হয়ে থাকে, তাহলে দ্রুত একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
আরও পড়ুন: জেনে নিন টিবি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার।
আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি উপকৃত হয়ে থাকলে অনুগ্রহ করে আপনার পরিচিতদের মাঝে শেয়ার করুন। সেই সাথে আজকের আর্টিকেলে বর্ণিত কোনো তথ্য ভুল প্রমাণিত হয়ে থাকলে অনুগ্রহ করে সঠিক তথ্য প্রমাণ সহ আমাদের সাথে যোগাযোগ করবেন।
আর এরকম নিত্যনতুন বিভিন্ন ধরনের তথ্য পেতে চাইলে আমাদের ওয়েব সাইট www.kanon24.com নিয়মিত ভিজিট করুন। এতোক্ষণ আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে আমাদের আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
কানন২৪ এর নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন।প্রতিটি মন্তব্যের জবাব দেওয়া হয়;
comment url