ফ্যাটি লিভার দূর করার ঘরোয়া উপায়-ফ্যাটি লিভার কি ভালো হয়
ফ্যাটি লিভার দূর করার ঘরোয়া উপায় এবং ফ্যাটি লিভার কি ভালো হয় এ সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলে আলোচনা করা হয়েছে। আপনি যদি ফ্যাটি লিভারের মতো সমস্যার সম্মূখীন হয়ে থাকেন, তাহলে আজকের আর্টিকেলটি শুধু মাত্র আপনার জন্য।
সেই সাথে আজকের আর্টিকেলে আরও আলোচনা করা হয়েছে ফ্যাটি লিভার কেন হয়, লক্ষণ, এ রোগ ভালো হয় কি না এ সম্পর্কেও বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। সুতরাং সময় ক্ষেপন না করে বিস্তারিত তথ্য গুলো জেনে নিন।.
ফ্যাটি লিভার দূর করার ঘরোয়া উপায়
আমাদের দেহের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি অঙ্গ হল লিভার বা যকৃত। এই অঙ্গটির অন্যতম কাজ হল হজমে সাহায্যকারী উৎসেচক তৈরি করে এবং একই সাথে দেহের বিষাক্ত টক্সিন বের করে দেওয়া সহ বিভিন্ন ধরনের কাজ করে থাকে এই লিভার। তাই লিভারে সুস্থ্যতা অনেক জরুরি একটি বিষয়।
লিভারে অল্প পরিমাণে চর্বি থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু বিভিন্ন কারনের এই লিভারে অতিরিক্ত চর্বি জমে যায়। যা খুবই ক্ষতিকারক। লিভারে চর্বি জমাকে সাধারনত ফ্যাটি লিভার বা 'হেপাটিক স্টেটোসিস' বলা হয়ে থাকে। আর ফ্যাটি লিভারের মতো সমস্যা বা লিভারে বা যকৃতে চর্বি জমে গেলে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য জটিলতা দেখা দিয়ে থাকে।
আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে ফ্যাটি লিভার দূর করার ঘরোয়া উপায়, কেন লিভারে চর্বি জমে, এর লক্ষণ সহ ফ্যাটি লিভার সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য আজকের আর্টিকেলে আলোচনা করা হয়েছে। সুতরাং ফ্যাটি লিভার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে আজকের আর্টিকেল বা প্রতিবেদনটি সম্পূর্ণ পড়ুন।
আদা, পুদিনা পাতা ও লেমনগ্রাস: ফ্যাটি লিভার দূর করার জন্য আপনি চাইলে আদা, পুদিনা পাতা এবং লেমন গ্রাস দিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে নিন এবং পান করুন। এতে করে আপনার ফ্যাটি লিভারে সমস্যা অনেকটাই কমে যাবে এবং লিভার সুস্থ্য থাকবে। ফ্যাটি লিভার দূর করার ঘরোয়া উপায় গুলোর মধ্যে এটি অন্যতম।
পুদিনা পাতা: ফ্যাটি লিভারের সমস্যা দূর করতে হলে পুদিনা পাতা খেতে পারেন। কেননা পুদিনা পাতাতে বিদ্যমান পুষ্টি উপাদান লিভারের প্রদাহ এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমিয়ে দিয়ে থাকে। এতে করে লিভার ভালো থাকে। সেই সাথে এটি নিয়মিত খেলে হজমে সহায়তা করে থাকে এবং ফ্যাটি লিভারের লক্ষণ উপশম করে থাকে। ফ্যাটি লিভার দূর করার ঘরোয়া উপায় গুলোর মধ্যে এটি একটি।
আদা: আদাকে বলা হয়ে থাকে সব রোগের দাদা। কেননা এতে বিদ্যমান রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য। যা শরীরের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা থেকে রক্ষা করে থাকে এবং সেই সাথে ফ্যাটি লিভারের জন্য সৃষ্টি ক্ষতি থেকে লিভারকে রক্ষা করে থাকে। সেই সাথে এটি হজমে সহায়তা করেও থাকে।
লেমন গ্রাস: লেমন গ্রাসে বিদ্যমান পুষ্টি উপাদান গুলো লিভারে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি এবং প্রদাহ কমাতে সহায়তা করে থাকে। সেই সাথে এটি খেলে ফ্যাটি লিভারের জন্য হওয়া ক্ষতি থেকে লিভারকে রক্ষা করা থাকে। ফ্যাটি লিভার দূর করার ঘরোয়া উপায় গুলোর মধ্যে এটি একটি।
ফ্যাটি লিভার কি ভালো হয়
ফ্যাটি লিভার কি ভালো হয় এ সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই সঠিক ধারণা নেই। ফ্যাটি লিভার বা লিভারে চর্বি জমা এমন একটি রোগ যা সহজেই ভালো হয় না। তবে আপনি যদি নিয়মিত সুষম খাবার খান, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখেন, অ্যালকোহল সেবন থেকে বিরত থাকেন, নিয়মিত ব্যয়াম করেন তাহলে এ রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।
আরও পড়ুন: জেনে নিন টিবি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার।
এছাড়াও আপনার লিভার সুস্থ্য আছে কিনা এসব বিষয়ে জানার জন্য নিয়মিত লিভার পরীক্ষা করতে পারেন। আর লিভারে কোনো সমস্যা দেখা দিলে দেরি না করে দ্রুত একটি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকলের পরামর্শ নিতে পারেন। এতে করে আপনি দ্রুত সুস্থ্য হবেন।
ফ্যাটি লিভারের লক্ষণ
- খাবার খাওয়া মাত্রই বদ হজম হয়।
- হঠাৎ দ্রুত ওজন হ্রাস হয়ে যায়।
- ক্লান্তি এবং শারীরিক দুর্বলতা
- মাথা ব্যথা হতে পারে।
- উচ্চ কলেস্টোরল।
- ডায়াবেটিস।
- ডিপ্রেশনে ভুগতে পারেন।
- খাবারের সময় বমি বমি ভাব হয়ে থাকে।
- অনেক সময় পেট ফুলে যেতে পারে।
- পেটে অতিরিক্ত মেদ জমলে।
- আর পেট ফুলার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রতাঙ্গ গুলোও ফুলে যেতে পারে।
- মূলত ফ্যাটি লিভারের লক্ষণ এগুলোই। এছাড়াও বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তির উপায়
অ্যালকোহল: ফ্যাটি লিভার বা লিভারে চর্বি জমার অন্যতম কারন হল অ্যালকোহল পান করা বা মদ্য পান করা। সুতরাং আপনি যদি ফ্যাটি লিভারের সমস্যা থেকে নিজেকে মুক্ত করতে চান, তাহলে অবশ্যই আপনাকে অ্যালকোহল বা মদ্য পান থেকে বিরত থাকতে হবে।
দুধ চা বা কফি: আপনার যদি দুধ চা বা দুধ কফি পান করার অভ্যাস থাকে তাহলে সেই অভ্যাস যত দ্রুত সম্ভব পরিহার করতে হবে। সেই সাথে ঘন দুধের তৈরি খাবার বা ফুল ক্রিম মিল্ক খাদ্যতালিকা থেকে একেবারে বাদ দিতে হবে। এতে করে আপনি এ সমস্যা থেকে মুক্ত পাবেন।
ব্যয়াম: শারীরিক ভাবে সুস্থ্য থাকতে এবং লিভার ভালো রাখতে প্রতিদিন ১ ঘণ্টা করে ব্যয়াম করুন। এতে করে আপনি অনেক সুস্থ্য থাকবেন। সেই সাথে লিভারের চর্বি জমতেও পারবেনা।
পানি পান: প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমান পানি পান করুন। এতে করে আপনার লিভার ভালো থাকবে।
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে: লিভাররের সুস্থ্যতার জন্য আপনাকে অবশ্যই আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। তানাহলে ফ্যাটি লিভারের মতো বিভিন্ন সমস্যায় ভুক্ততে হবে। ফ্যাটি লিভার দূর করার জন্য ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন। ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তির উপায় গুলোর মধ্য এটি অন্যতম।
অতিরিক্ত মসলা ও চর্বি যুক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে: লিভারকে বিভিন্ন ধরনের রোগ থেকে দূরে রাখতে হলে আপনাকে অবশ্যই অতিরিক্ত মসলা, তেল ও চর্বি জাতীয় খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে।
লবণ: আপনার যদি অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার অভ্যাস থাকে, তাহলে এখনি সেটাকে বাদ দিতে হবে। তা না হলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। সুতরাং লিভারে সুস্থ্যতায় অতিরিক্ত লবণ খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
চিনি: চিনি বা মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়ার অভ্যাস থাকলে এখন থেকেই বাদ দিন। কেননা লিভার যদি আপনি সুস্থ্য রাখতে চান, তাহলে চিনি খাওয়া ছেড়ে দিন।
ফ্যাটি লিভার হলে কি খাওয়া উচিত
ফ্যাটি লিভার হলে কি খাওয়া উচিত সেই খাবার গুলো হল-
কি খেলে লিভারের চর্বি কমবে?
কি খেলে লিভারের চর্বি কমবে এ সম্পর্কে অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন, এর উত্তর হল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার, ওমেগা থ্রী সমৃদ্ধ খাবার, ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খেতে পারেন।
লিভার ফুলে গেলে কি হয়?
লিভার ফুলে গেলে কি হয়- লিভার ফুলে গেলে রক্ত চাপ বৃদ্ধি পাবে যা পোর্টাল হাইপারটেনশনের দিকে পরিচালিত করবে। যার ফলে বিভিন্ন স্বাস্থ্য জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।
কলা কি লিভারের জন্য ভালো?
কলা কি লিভারের জন্য ভালো- হ্যাঁ অবশ্যই। কেননা লা ভিটামিন B6, C এবং A, পটাশিয়াম, ফাইবার সহ বিভিন্ন পুষ্টি গুণ সমৃদ্ধ। যার ফলে এটির প্রতিরোধী স্টার্চও বেশি, যা লিভারের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এই পুষ্টিগুলি নিশ্চিত করে যে লিভার সঠিকভাবে কাজ করে থাকে।
কি খেলে লিভার ভালো থাকে?
কি খেলে লিভার ভালো থাকে এ সম্পর্কে ইতিমধ্যে আজকের আর্টিকেলের উপরের অংশে ইতিমধ্যে বিভিন্ন তথ্য আলোচনা করা হয়েছে। সুতরাং অনুগ্রহ করে বিস্তারিত তথ্য জানতে উপরের অংশটি পড়ে নিন।
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে ইতিমধ্যে ফ্যাটি লিভার দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জেনেছেন। সুতরাং আপনি যদি ফ্যাটি লিভারের মতো জটিল সমস্যা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে চান, তাহলে উপরের নিয়ম গুলো মেনে চলুন। আর আপনার ফ্যাটি লিভারের সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।
আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি উপকৃত হয়ে থাকলে অনুগ্রহ করে আপনার পরিচিতদের মাঝে শেয়ার করুন। সেই সাথে আজকের আর্টিকেলে বর্ণিত কোনো তথ্য ভুল প্রমাণিত হয়ে থাকলে অনুগ্রহ করে সঠিক তথ্য প্রমাণ সহ আমাদের সাথে যোগাযোগ করবেন।
আর এরকম নিত্যনতুন বিভিন্ন ধরনের তথ্য পেতে চাইলে আমাদের ওয়েব সাইট www.kanon24.com নিয়মিত ভিজিট করুন। এতোক্ষণ আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে আমাদের আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
কানন২৪ এর নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন।প্রতিটি মন্তব্যের জবাব দেওয়া হয়;
comment url