চিরতরে মেছতা দূর করার উপায়-মেছতা দূর করার ক্রিমের নাম
চিরতরে মেছতা দূর করার উপায় এবং মেছতা দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলে আলোচনা করা হয়েছে। আপনি যদি মেছতার মতো বিব্রতকর সমস্যার সম্মূখীন হয়ে থাকেন, তাহলে আজকের আর্টিকালটি শুধু মাত্র আপনার জন্য।
সেই সাথে আজকের আর্টিকেলে আরও আলোচনা করা হয়েছে মেছতা হওয়ার কারন আর এই মেছতা হলে কিভাবে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন, এ সব সম্পর্কে বিস্তারিত সকল তথ্য। সুতরাং সময় ক্ষেপন না করে আজকের আর্টিকেলটি বিস্তারিতভাবে পড়ুন।.
চিরতরে মেছতা দূর করার উপায়
আমরা তো সবাই চাই নিজেকে অন্যের সামন্যে আকর্ষণীয় ভাবে উপস্থাপন করতে। কিন্তু আমাদের ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার জন্য সেটা ঠিক ঠাক ভাবে অনেক সময় আর হয়ে উঠেনা। আর ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি সমস্যা হল মেছতার মতো বিব্রতকর একটি সমস্যা। যার ফলে আমাদের মুখের সৌন্দর্য অনেকাংশে কমে যায়।
আর মেছতা এমনই একটি অস্বস্তিকর জটিল সমস্যা যা সহজেই দূর হতে চায় না। আর এই মেছতা যেকোনো বয়সেই হতে পারে কিন্তু বয়স বৃদ্ধির সাথে এই সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এই মেছতা দেখতে কিছুটা বাদামী রঙের ছোট ছোট দাগের মতো হয়ে থাকে। যার ফলে মুখের সৌন্দর্য অনেক পরিমান হ্রাস পায়।
তবে এই মেছতা দূর করার বিভিন্ন উপায় আছে, তার মধ্যে পাশ্ব-প্রতিক্রিয়া মুক্ত অন্যতম একটি উপায় হল প্রাকৃতিক বা ঘরোয়া উপায়। সুতরাং আপনি যদি মেছতার মতো সমস্যা দূর করতে চান, তাহলে আজকের আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ুন। চিরতরে মেছতা দূর করার উপায় গুলো হল-
হলুদের ব্যবহার: হলুদ রূপচর্চার জন্য সেই প্রাচীনকাল থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সেই সাথে এই হলুদ ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা সহজেই দূর করে থাকে। কেননা হলুদে বিদ্যমান কার্কিউমিন আমাদের ত্বকের জন্য খুবই উপকারি। সেই সাথে এতে বিদ্যমান রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও অন্যটি অ্যান্টি-মুটাগেন। যা ত্বকে বিভিন্ন সমস্যা দূর করে থাকে।
মেছতার মতো সমস্যা দূর করার জন্য প্রথমে হলুদ ভালো ভাবে বেটে পেস্ট তৈরি করে নিন। এরপরে আপনার ত্বকের যেখানে যেখানে মেছতা রয়েছে সেখানে ভালো মতো লাগিয়ে রাখতে হবে। সবশেষে ২০-২৫ মিনিট পরে পরিষ্কার পানি দিয়ে ভালো মতো ধুয়ে ফেলতে হবে। এই পদ্ধতিতে কিছু দিন হলুদ ব্যবহার করলে মেছতা দূর হয়ে যাবে।
লেবুর রস: লেবুর উপকারিতা সম্পর্কে আমরা কম বেশি প্রায় সবাই জানি। এই লেবুতে বিদ্যমান এসিড আমাদের ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে থাকে। এমনকি মেছতার মতো বিব্রতকর সমস্যাও দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে এই লেবুর রস।
এর জন্য আপনাকে প্রথমে পরিমান মতো এক চা চামচ লেবুর রস, এক চা চামচ বেসন এবং পরিমান মতো গোলাপজল নিয়ে ভালোমতো মিশ্রণ করে নিতে হবে। এরপরে ত্বকে ভালো মতো ব্যবহার করে ২০-২৫ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। এরপরে ভালো মতো ধুয়ে নিতে হবে। এভাবে সপ্তাহে তিন থেকে চারবার ব্যবহার করলে দ্রুত মেছতা দূর হয়ে যাবে।
মধু: রূপচর্চার জন্য সবচেয়ে বেশি কার্যকারি হল মধু। এমনি মধু হল সকল রোগের শেফা। আর এই মধু মেছতার মতো সমস্যা দূর করার জন্য খুবই কার্যকারী। এর জন্য আপনাকে প্রথমে এক চা চামচ মধু এবং এক চা চামচ পরিমান এলোভেরা জেল ভালোভাবে মিশ্রণ করে নিতে হবে। এরপরে ত্বকে ব্যবহার করে করতে হবে।
২০-২৫ মিনিট পরে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। তবে আপনি চাইলে আরও কিছু সময় রাখতে পারেন। এতে করে দ্রুত আপনার ত্বকের মেছতার সমস্যা দূর হয়ে যাবে। চিরতরে মেছতা দূর করার উপায় গুলোর মধ্যে এটি একটি।
মুলতানির মাটি: মুলতানির মাটি খুবই উপকারি একটি ফেসিয়াল প্যাক। কেননা মুলতানি মাটির প্যাক ত্বকে ব্যবহার করলে ত্বক ভিতর থেকে পরিষ্কার হয়ে যায় এবং মেছতার মতো সমস্যাও দূর হয়ে যায়। এর জন্য আপনাকে এক চা চামচ মুলতানি মাটি, এক চা চামচ মধু ও পরিমান মতো গোলাপজল ভালো মতো মিশ্রণ করে নিতে হবে।
এরপরে ত্বকে ব্যবহার করে ২০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। এরপরে ভালো করে ধুয়ে ফেলতে হবে। এই প্যাকটি সপ্তাহে ৩-৪ বার ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে দ্রুত মেছতা দূর হয়ে যাবে। চিরতরে মেছতা দূর করার উপায় গুলোর মধ্যে এটি অন্যতম একটি উপায়।
শসা: শসা দিয়ে মেছতা দূর করার জন্য প্রথমে শসা ভালো করে বেটে নিতে হবে। এরপরে শসার সাথে এক চা চামচ বেসন ও গোলাপজল ভালো ভাবে মিশ্রণ করে নিতে হবে। এরপরে মেছতার স্থানে লাগিয়ে ২০ মিনিট পরে ধুয়ে ফেলতে হবে। এটি নিয়মিত ভাবে স্পতাহে ৪/৫ বার ব্যবহার করলে মেছতার সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
টক দই: টক দই আমাদের ত্বকের জন্য খুবই উপকারি একটি উপাদান। টক দই ব্যবহার করে মেছতা দূর করার জন্য আপনাকে প্রথমে ৩/৪ চা চামচ পরিমান টক দই নিয়ে ভালো মতো ফেটিয়ে নিতে হবে, এর সঙ্গে এক চা চামচ মধু দিয়ে ভালোভাবে মিশ্রণ করে নিতে হবে। এরপরে মেছতার স্থানে ভালোমতো ব্যবহার করতে হবে।
৩০ মিনিট পরে ভালো মতো পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এতে করে আপনার ত্বকের মেছতার সমস্যা চিরতরে দূর হয়ে যাবে। এতে করে আপনার ত্বক থাকবে সতেজ, মসৃণ ও উজ্জ্বল। সুতরাং মেছতার সমস্যা দূর করার জন্য টক দইইয়ের ব্যবহার করতে পারেন। চিরতরে মেছতা দূর করার উপায় গুলোর মধ্যে এটি অন্যতম।
টমেটো: টমেটো মেছতা দূর করতে সবচেয়ে বেশি কার্যকারী ভূমিকা পালন করে থাকে। এর জন্য ৪ চা চামচ টমেটোর রস, হাফ চামচ ময়দা ও অলিভ অয়েল দিয়ে ভালো মতো মিশ্রণ করে নিতে হবে। এরপরে ২০ মিনিট ত্বকে লাগিয়ে রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে। এতে করে মেছতার মতো সমস্যা সহজেই দূর হয়ে যাবে।
গরুর দুধ: গরুর দিয়ে মেছতা দূর করার জন্য প্রথমে আপনাকে ৫ চা চামচের মতো খাঁটি গরুর দুধ নিতে হবে। এরপরে এক চা চামচ পরিমাণ ময়দা নিয়ে ভালো মতো মিশ্রণ করে নিতে হবে। এরপরে ত্বকে ব্যবহার করে ২৫ মিনিট রেখে ভালো মতো ধুয়ে ফেলতে হবে এতে করে এ সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
মেছতা দূর করার ঘরোয়া উপায়
মেছতার মতো বিব্রতকর সমস্যা দূর করার জন্য বিভিন্ন রকম ঘরোয়া উপায় আছে। আর্থাৎ আমাদের সবার ঘরেই থাকা বিভিন্ন রকম প্রাকৃতিক উপাদান থাকে যেগুলোর নিয়মিত ব্যবহার করলে মুখের মেছতা সহজেই দূর হয়ে যায়। বিশেষ করে হলুদ, লেবুর রস, টক দই সহ বিভিন্ন রকমের উপদান আছে যেগুলোর নিয়মিত ব্যবহারে এ সমস্যা দূর হয়ে যায়।
এলোভেরা দিয়ে মেছতা দূর করার উপায়
এলোভেরা দিয়ে মেছতা দূর করার উপায় হল এলোভেরা জেল ত্বক ভালো রাখতে এবং ত্বকের মেছতা সহ বিভিন্ন রকম সমস্যা দূর করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এর জন্য প্রথমে আপনাকে পরিমান মতো এলোভেরা জেল নিতে হবে। এর পরে এক চা চামচ পরিমান টমেটোর রস নিতে হবে।এরপরে উপাদান দুইটি ভালোভাবে মিশ্রণ করে নিতে হবে।
মিশ্রণটি তৈরি হয়ে গেলে ত্বকে ভালো মতো লাগিয়ে ২০-২৫ মিনিটের মতো রেখে দিতে হবে। এরপরে দুধে ফেলতে হবে। এতে করে আপনার ত্বকের মেছতার মতো বিব্রতকর ও অস্বস্তিকর সমস্যা চিরোতরে দূর হয়ে যাবে। সুতারং আপনি যদি মেছতার মতো সমস্যা দূর করতে চান, তাহলে এই এলোভেরার জেল ব্যবহার করতে পারেন।
পুরুষের মেছতা দূর করার উপায়
পুরুষের মেছতা দূর করার উপায় সম্পর্কে অনেকে জানতে চেয়ে থাকে। প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আপনি পরুষ কিংবা নারী যেই হোন আজকের আর্টিকেলের উপরের অংশে বর্ণিত নিয়ম গুলো অনুসরণ করলে অতি দ্রুতই চিরতরে এই মেছতার মতো অস্বস্তিকর ও জটিল সমস্যা থেকে সহজেই মুক্তি পাবেন।
মেছতা দূর করার ক্রিমের নাম
মেছতা দূরার করার জন্য সবচেয়ে ভালো ও কার্যকারী উপায় হল প্রাকৃতিক উপায়। যেগুলো সম্পর্কে আপনারা ইতিমধ্যে অবগত হয়েছেন। তবে আপনার মেছতার অবস্থা যদি খুবই ভয়ংকর রূপ ধারন করে থাকে তাহলে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন। মেছতা দূর করার ক্রিমের নাম হল-
Melonayc ক্রিম, মেছতা কেয়ার ক্রিম সহ বিভিন্ন ক্রিম বাজারে পাওয়া যায়।। আর এই ক্রিম গুলো ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তবেই ব্যবহার করবেন।
মেছতা হওয়ার কারন
- বংশগত কারনে বা জিন গত কারনেই মূলত মেছতার সমস্যা বেশি হয়ে থাকে।
- নারীদের দীর্ঘদিন জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল খাওয়ার ফলেও মেছতা হয়ে থাকে।
- গর্ভাবস্থায় অনেক নারীর মুখে মেছতা হয়ে থাকে।
- সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মির জন্যেও এ সমস্যা হয়ে থাকে।
- ত্বকের যত্নে ভুল প্রোডাক্টের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
- এগুলো মূলত মেছতা হওয়ার কারন। তবে এগুলো ছাড়াও বিভিন্ন কারনে এ সমস্যা হয়ে থাকে।
মুখে মেচেতার দাগ কেন হয়?
মুখে মেচেতার দাগ কেন হয়- জিনগত কারনে, সূর্যের রশ্মির কারনে, জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল সেবন সহ বিভিন্ন কারনেই মেছতা হতে পারে।
মেছতার স্থায়ী সমাধান কি?
মেছতার স্থায়ী সমাধান কি- হ্যাঁ অবশ্যই। আজকের আর্টিকেলে ইতিমধ্যে চিরতরে মেছাতা দূর করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক, আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে ইতিমধ্যে চিরতরে মেছতা দূর করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত বিভিন্ন তথ্য জেনেছেন। সুতরাং আপনি যদি মেছতার মতো সমস্যায় ভুগে থাকেন, তাহলে আজকের আর্টিকেলে বর্ণিত নিয়ম গুলো মেনে চলতে পারেন। এতে করে আপনার সমস্যা দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে।
আরও পড়ুন: জেনে নিন ত্বক ফর্সা করার ঘরোয়া উপায়।
আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি যদি উপকৃত হয়ে থাকেন, তাহলে অনুগ্রহ করে পরিচিতদের মাঝে শেয়ার করবেন। আর আজকের আর্টিকেলের কোনো তথ্য আপনার কাছে ভুল প্রমাণিত হলে অনুগ্রহ করে সঠিক তথ্য প্রমাণ সহ আমাদের সাথে যোগাযোগ করবেন।
সেই সাথে এরকম নিত্য নতুন বিভিন্ন ধরনের তথ্য পেতে আপনাদের ওয়েবসাইট www.kanon24.com নিয়মিত ভিজিট করুন। এতোক্ষণ আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে আর্টিকেলটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
কানন২৪ এর নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন।প্রতিটি মন্তব্যের জবাব দেওয়া হয়;
comment url