চোখ উঠলে করণীয় কি এবং চোখ উঠার ঘরোয়া চিকিৎসা
চোখ উঠলে করণীয় কি এবং চোখ উঠার ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আপনি যদি চোখ উঠার কারন ও চোখ উঠলে করণীয় সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হয়ে থাকেন, তাহলে আজকের আর্টিকেলটি শুধু মাত্র আপনার জন্য।
সেই সাথে আজকের আর্টিকেলে আরও আলোচনা করা হয়েছে কেন চোখ উঠে, বাচ্চাদের চোখ উঠলে কি করণীয় শ চোখ উঠা সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলে বিভিন্ন তথ্য আজকের আর্টিকেলে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হয়েছে। সুতরাং সময় ক্ষেপন না করে বিস্তারিত তথ্য জেনে নিন।.
চোখ উঠলে করণীয় কি
চোখ শুধু মনের গহিনে ঘুরে বেড়ানো কথাগুলোই বলেনা একই সাথে এই চোখ আপনার শরীরের বিভিন্ন রোগের কথাও বলে থাকে। ঠিক তেমনই একটি রোগ হল কনজাংটিভাইটিস বা যা আমরা বলে থাকি চোখ উঠা রোগ। এটি একটি সংক্রামণ। যা এখন মহামারির রূপ ধারন করেছে। এই রোগের সংক্রামণ দেখা দিলে চোখের সাদা অংশ লাল হয়ে যায়।
একই সাথে চোখের চারপাশ ব্যথা অনুভূত হয়, চোখ খচ খচ সহ বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে। যা খুবই অস্বস্তিকর এবং বিব্রতকর একটি ব্যাপার। এই রোগ মূলত দুই থেকে তিন দিন বা অনেকের ক্ষেত্রে অনেকদিন পর্যন্ত ভুগতে হয়। তবে এই রোগ হলে আতকিঙ্খিত না হয়ে মেনে চলতে হবে কিছু নিয়ম। এতে করে আপনি দ্রুত সুস্থ্য হয়ে যাবেন।
আরও পড়ুন: জেনে নিন পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর উপায়।
আজকের আর্টিকেলে চোখ উঠলে করণীয় কি, চোখ কেন উঠে, লক্ষণ সহ চোখ উঠা সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য আজকের আর্টিকেলে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হয়েছে। সুতরাং আপনি বা আপনার পরিবারের কেউ যদি এই চোখ উঠা রোগে ভুগে থাকে তাহলে আজকের আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ুন। এতে করে বিস্তারিত সকল তথ্য গুলো জানতে পারবেন।
চোখ উঠলে বেশ কিছু নিয়ম মেনে চললে দ্রুতই এ রোগের সংক্রামণ দূর হয়ে যায়। ফলে চোখ উঠার সমস্যাও ঠিক হয়ে যায়। চোখ উঠলে করণীয় কি এ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন-
হাত ধোয়া: চোখ উঠার সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে থাকলে কিছুক্ষণ পর পর সাবান পানি দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিতে হবে বা পরিষ্কার করে নিতে হবে। এতে করে সংক্রামণ ছড়াতে পারবেনা।
চোখ মুছা: চোখ উঠলে চোখ দিয়ে পানি পড়ে এতে করে চোখ ভিজা থাকে। তাই ভিজা চোখ মুছার জন্য আপনি চাইলে টিস্যু পেপার ব্যবহার করতে পারেন। টিস্যু ব্যবহার করা হলে অবশ্যই টিস্যুটি নির্দিষ্ট ময়লার ঝুড়িতে ফেলবেন।
চশমা ব্যবহার: চোখ উঠলে অবশ্যই চশমা বা স্নানগ্লাস ব্যবহার করতে হবে। এতে করে চোখে স্পর্শ করার পরিমানও কমবে। একই সাথে চোখে ধোঁয়া, ধুলাবালিসহ বিভিন্ন জীবানু থেকে চোখ রক্ষা পাবে।এতে করে আলোর সমস্যাও কম মনে হবে।
খাদ্যাভাস: চোখ উঠলে খাদ্যাভাসে কিছুটা পরিবর্তন আনতে হবে। এ সময় ভিটামিন সি যুক্ত খাবার বেশি বেশি খেতে হবে এবং একই সাথে সুষম খাবার ও খেতে হবে।
পোশাক: নিজের ব্যবহৃত পোশাক এবং প্রসাধনী অন্য কাউকে ব্যবহার করতে দেওয়া যাবেনা এবং অন্যকারও পোশাক বা প্রসাধনী ব্যবহার করাও যাবে না।
ড্রপ ব্যবহার: চোখ উঠলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ড্রপ ব্যবহার করতে হবে। এতে করে আপনি অনেকটাই স্বস্তি পাবেন এবং একই সাথে দ্রুত চোখ উঠার মতো সমস্যা ভালো হয়ে যাবে।
চিকিৎসকের পরামর্শ: আপনার অবস্থা খারাপ হয়ে থাকে অর্থাৎ অতিরিক্ত খচখচে ভাব জ্বালা পোড়া সহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন। এতে করে দ্রুত সুস্থ্য হয়ে যাবেন।
চোখ উঠার ঘরোয়া চিকিৎসা
চোখ উঠলে নিয়মিত নরম পরিষ্কার কাপড় বা তুলা ভিজিয়ে চোখ মুছতে হবে মাঝে মাঝে। আপনার চোখে যদি অনেক ব্যথা করে তাহলে প্রথমিক ভাবে হালকা গরম পানিতে কাপড় বা তুলা ভিজিয়ে চোখের উপরে হালকা করে ছেঁক দিতে পারেন এতে করে ব্যথা অনেকটাই কমে যাবে। ফলে আপনি স্বস্তি পাবেন।
গরম পানির ছেঁক দেওয়া হলে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে এবার বরফ বা ঠান্ডা পানিতে কাপড় বা তুলা ভিজিয়ে চোখের উপরে ঠান্ডা ছেঁক দিতে পারেন। এতে করে অনেকটাই আরাম অনুভব করবেন। তবে চোখে চাপ যেন না লাগে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এর পাশাপাশি মোবাইল ও কম্পিউটার বা টিভি দেখা থেকে বিরত থাকুন।
চোখ উঠার কারণ
চোখ উঠার অনেক গুলো কারণ আছে। এর মধ্যে অন্যতম কারন গুলো হল-
- ভাইরাস অথবা ব্যাকটেরিয়া ইনফেকশন থেকে এই চোখ উঠার রোগ হতে পারে। যেমন- সর্দি বা ঠান্ডা জনিত সমস্যা, চোখ দিয়ে পানি পড়া ইত্যাদি।
- এলার্জি জনিত সমস্যা থাকলে এই চোখ উঠার মতো সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে।
- কেমিক্যাল বা রাসায়নিক পদার্থর বিষক্রিয়ার জন্যেও চোখ উঠে।
- যে মৌসুমে বাতাসে আদ্রতা বেশি থাকে, সে সময় এ চোখ উঠার সমস্যা বেশি হয়ে থাকে।
- এগুলোই মূলত চোখ উঠার কারণ। এছাড়াও বিভিন্ন কারনেও চোখ উঠার সমস্যা হতে পারে।
চোখ উঠার লক্ষণ
চোখ উঠার অনেক গুলো লক্ষণ প্রকাশিত হয়ে থাকে। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম লক্ষণ গুলো হল-
- চোখের সাদা অংশ লাল হয়ে যাওয়া।
- সাধারনত প্রথমে এক চোখ লাল হয়ে থাকে। তবে অনেক সময়ই একই সাথে দুই চোখ লাল হয়।
- চোখ দিয়ে পানি পড়তে থাকে।
- চোখের পাতা প্রচন্ড ব্যথা করে।
- সেই সাথে চোখের পাতা ফুলেও যায়।
- চোখের মধ্যে জ্বালাপোড়া করে।
- চোখ খচখচ করে।
- চোখে আলো লাগলে তা সহ্য হয় না।
- ঘুম থেকে উঠার পরে দুই চোখর পাতা এক সাথে জোড়া লেগে থাকে।
- চোখে মিউকাস জাতীয় তরল অথবা পুঁজ জমা হয়ে থাকে। অনেক সময় সেই পুঁজ শুকিয়ে চোখে চটচট করে থাকে।
- কারও চোখে যদি কার্নিয়া দেখা দেয় তাহলে চোখে ঝাপসাও দেখতে পারেন।
- মূলত চোখ উঠার লক্ষণ এগুলোই।
চোখ উঠা কি ছোঁয়াচে
চোখ উঠা কি ছোঁয়াচে না কি এ সম্পর্কে অনেকেই জানতে আগ্রহী হয়ে থাকেন, কেননা এই রোগ খুবই অস্বস্তিকর একটি রোগ। যার ফলে এ রোগের সংক্রামণ হলে রোগী পড়তে হয় না মুখি ঝামেলায়। চোখ উঠা রোগ প্রকৃত পক্ষে একটি ছোঁয়াচে। পরিবারের একজনের হলে অন্যদের মাঝে তা ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন: জেনে নিন শ্বেতী রোগ থেকে মুক্তির উপায়।
শুধু সম্ভাবনায় থাকেনা একই সাথে অন্যান্য সদেস্যরা আক্রান্ত হয়েও থাকেন। এ ভাবেই আস্তে আস্তে এ রোগ বিস্তার লাভ করে থাকে। সুতরাং আপনি যদি চোখ উঠার মতো অস্বস্তিকর রোগের সংক্রামণে ভুগে থাকে থাকেন, তাহলে আপনাকে থাকতে হবে সতর্ক এবং একই সাথে পরিবারের অন্যদেরও থাকতে হবে সতর্ক। তা না হলে এ রোগে সংক্রামণ ছড়িয়ে পড়বে।
চোখ উঠার সংক্রামণ এ ভাবেই ছড়াই
- সাধারনত রোগ ছড়ানোর অন্যতম কারন হল আক্রান্ত ব্যক্তির গামছা, তোয়ালে বা রুমাল ব্যবহার করা।
- আক্রান্ত ব্যক্তির কোন ব্যবহৃত জিনিসে হাত দিয়ে সেই হাত না ধুয়ে চোখ হাত দিলে এ রোগের সংক্রামণ ছড়িয়ে পড়ে।
- আক্রান্ত ব্যক্তির চশমা বা স্নানগ্লাস ব্যবহার করলে।
- হাঁচি বা কাঁশির মাধ্যমেও এ রোগের সংক্রামণ ছড়িয়ে থাকে।
- মৌসুমে বাতাসে আদ্রতা বেশি থাকলে দ্রুত এ রোগের সংক্রামণ ছড়িয়ে থাকে।
- মূলত চোখ উঠার সংক্রামণ এ ভাবেই ছড়াই
বাচ্চাদের চোখ উঠলে করণীয় কি
বাচ্চাদের চোখ উঠলে করণীয় কি এ সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হল-
- বাচ্চাদের চোখ উঠলে বাচ্চার চোখ নিয়মিত পরিষ্কার করে দিন।
- আপনার বাচ্চার যদি চোখ উঠে তাহলে বাহিরে যেতে দিবেন না। বাড়িতেই রাখার চেষ্টা করুন। কেননা এতে করে অন্যান্য বাচ্চা বা প্রাপ্ত বয়স্করাও আক্রান্ত হয়ে পারে। তাই বাচ্চাকে কয়েকদিন স্কুলে না পাঠানো ভালো।
- তুলা বা পরিষ্কার নরম কাপড় ভিজিয়ে বাচ্চার চোখ পরিষ্কার করে দিতে পারেন।
- বাচ্চার চোখ উঠলে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন। এতে করে আপনার বাচ্চা দ্রুত সুস্থ্য হয়ে উঠবে।
চোখ উঠার ড্রপ এর নাম
চোখ উঠার ড্রপ এর নাম অনেকেই জানতে চেয়ে থাকেন, তবে আপনি যদি চোখ উঠার মতো সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকেন, তাহলে অনুগ্রহ করে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তবে ড্রপ ব্যবহার করবেন। যার তার কথা শুনে কোনো ড্রপ ব্যবহার করবেন না। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে।
চোখ উঠলে কি চিকিৎসা?
চোখ উঠলে কি চিকিৎসা সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলের উপরের অংশে ইতিমধ্যে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হয়েছে। সুতরাং অনুগ্রহ করে পড়ে নিবেন। এতে করে বিস্তারিত তথ্য গুলো সম্পর্কে জানতে পারবেন।
চোখ ওঠা কত দিনে ভালো হয়?
চোখ ওঠা কত দিনে ভালো হয় এ সম্পর্কে অনেকে জানতে চেয়ে থাকেন, এর উত্তর হল- চোখ উঠার প্রথম ৩-৪ দিন খুবই প্রকোপ থাকে এবং ৭-৮ দিন পরে থেকে চোখ উঠার সংক্রামণ গুলো কমে যায়।
২ বছরের বাচ্চার চোখ পরিষ্কার করার উপায়?
২ বছরের বাচ্চার চোখ পরিষ্কার করার উপায় হল- পরিষ্কার পানি তুলা অথবা পরিষ্কার কাপড় ভিজিয়ে নিতে হবে। তারপরে আস্তে আস্তে বাচ্চার চোখ পরিষ্কার করে দিন। লক্ষ্য রাখবেন যেন চাপ বা আঘাত না লাগে।
বাচ্চাদের চোখ পরিষ্কার করার উপায়?
বাচ্চাদের চোখ পরিষ্কার করার উপায় হল- তুলা বা পরিষ্কার কাপড় পরিষ্কার পানিতে ভিজিয়ে শিশুর চোখ পরিষ্কার করে দিতে পারেন।
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক, চোখ উঠলে করণীয় কি এ সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে ইতিমধ্যে জেনেছেন। সুতরাং আপনি যদি চোখ উঠার মতো সমস্যার সম্মূখীন হয়ে থাকেন, তাহলে অনুগ্রহ করে আজকের আর্টিকেলে বর্ণিত নিয়ম গুলো মেনে চলতে পারেন, তবে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি যদি উপকৃত হয়ে থাকেন, তাহলে অনুগ্রহ করে পরিচতদের মাঝে শেয়ার করবেন।। আর আজকের আর্টিকেলের কোনো তথ্য ভুল প্রমাণিত হলে অনুগ্রহ করে সঠিক তথ্য প্রমাণ সহ আমাদের সাথে যোগাযোগ করবেন। এতে করে আমরাও আমাদের ভুল সংশোধন করতে পারব।
প্রতিনিয়ত এরকম নিত্যনতুন তথ্য পেতে চাইলে আমাদের ওয়েব সাইট www.kanon24.com নিয়মিত ভিজিট করন। আজকের আর্টিকেলটি আপনার মূলবান সময় ও ধৈর্য দিয়ে পড়ার জন্য আমাদের ওয়েবসাইটের পক্ষ থেকে আপনাকে জানায় অসংখ্য ধন্যবাদ।
কানন২৪ এর নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন।প্রতিটি মন্তব্যের জবাব দেওয়া হয়;
comment url