জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন নতুন নিয়ম

প্রিয় পাঠক, আজকের আর্টিকেলে জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন এবং ভোটার আইডি কার্ড নাম সংশোধন করতে কি কি লাগে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। সুতরাং উক্ত বিষয়টি সম্পর্কে আপনি যদি জানতে আগ্রহী হয়ে থাকেন তাহলে আজকের আর্টিকেলটি শুধু মাত্র আপনার জন্য।
জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন
এছাড়াও আজকে আর্টিকেলে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করতে কত দিন লাগে এবং জাতীয় পরিচয় পত্র চেক করার নিয়ম সহ জাতীয় পরিচয় পত্র সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হয়েছে। সুতরাং সময় ক্ষেপন না করে বিস্তারিত তথ্য জেনে নিন।

ভূমিকা

জাতীয় পরিচয় পত্র একটি দেশের একজন নাগরিকের পরিচয় বহন করে থাকে। এই জাতীয় পরিচয় প্রত্র খুবই গুরুত্ব পূর্ণ একটি নথি। আপনি যে একজন বাংলাদেশের নাগরিক তার অন্যতম প্রমণ পত্র হল জাতীয় পরিয়চ পত্র। এছাড়াও জাতীয় পরিচয় পত্র ছাড়া রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে হবে।

আপনি আপনার যেকোনো প্রয়োজনীয় কাজে যাবেন সেখানেই প্রয়োজন পড়বে এই জাতীয় পরিচয় পত্রের। যেমন- ব্যাংক একাউন্ট খুলতে, জমি রেজিস্ট্রি, বিবাহ রেজিস্ট্রি, পাসপোর্ট, ভিসা, চাকরি, বিভিন্ন ব্যবসায়ী চুক্তিনামা সহ আমাদের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন কাজে প্রয়োজন পড়ে এই জাতীয় পরিচয় পত্রের।

তবে এই মূলবান পরিচয় পত্রে অনেক সময় ভুল বশত বিভিন্ন তথ্য ভুল হয়ে যায়। বিশেষ করে নামের বানান, জন্ম তারিখ ইত্যাদি। যার ফলে আমাদের বিভিন্ন সমস্যার সম্মূখীন হতে হয়। কেননা এই জাতীয় পরিচইয় পত্রের একটি ভুলের জন্য কোনো কাজ হয়না। যার ফলে দিনের পর দিন অতিবাহিত হতে থাকে।
আবার আমরা অনেকেই জানিনা যে কিভাবে আমাদের জাতীয় পরিচয় পত্রের ভুল সংশোধন করতে হয় এই সম্পর্কে যার জন্য আমাদের অনেক সময় বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মূখীন হতে হয়। কিন্তু জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধনের সঠিক নিয়ম যদি আমাদের জানা থাকে, তাহলে খুবই সহজেই এই কাজ সম্পূর্ণ করা সম্ভব হবে।

তাই আজকের আর্টিকেলে মাধ্যমে জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন সহ জাতীয় পরিচয় পত্রের বিভিন্ন তথ্য বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হয়েছে। সুতরাং আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার মাধ্যমে বিস্তারিত তথ্য জেনে নিন।

জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন 

জাতীয় পরতিচয় পত্রের সংশোধনের নিয়ম খুবই সহজ একটি বিষয়। এর জন্য প্রথমে আপনাকে আপনার হাতে থাকা স্মার্ট ফোন বা ল্যাপটপ বা কম্পিউটারের সাহায্যে অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। কেননা বর্তমান সময় প্রায় সকল কাজ যেমন অনলাইনের মাধ্যমে করতে হয় ঠিক তেমনি জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধনও অনলাইনের মাধ্যমে করতে হয়।
তাই অনলাইন ছাড়া অন্য কোনো মাধ্যমে জাতীয় পরিচয় পত্র বা ভোটার আইডি কার্ডের সংশোধনী করা যায় না।
অনলাইনে জাতীয় পরিচয় পত্র বা NID কার্ড সংশোধনের নিয়ম-
  • অনলাইনের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধনের জন্য প্রথমে আপনার হাতে থাকা স্মার্ট ফোনের মাধ্যমে প্লে স্টোরে গিয়ে NID WALLET নামের APP টি ডাউনলোড করে ইন্ট্রল করতে হবে। কেননা এর মধ্যমে আপনার প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট স্ক্যান করে সাবমিট করতে হবে।
  • এই APP ডাউনলোড সম্পূর্ণ হয়ে গেলে তারপরে আপনাকে গুগলে যেতে হবে এবং টাইপ করুন services.nidw.gov.bd তারপরে এখানে আপনার বর্তমান জাতীয় পরিচয় পত্র বা NID নাম্বার, জন্ম তারিখ, নাম, ঠিকানা সহ প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে রেজিট্রেশন করতে হবে। তবে আপনি দি একাউন্ট তৈরি না করেন তাহলে কাজ করতে পারবেন না।
  • রেজিস্ট্রেশন সম্পূর্ণ হয়ে গেলে এবার আপনি আপনার বর্তমান তৈরি করা প্রোফাইলে প্রবেশ করুন। প্রবেশের পরে অনেক গুলো অপশন দেখবেন। এই সব অপশন গুলোর মধ্যমে এবার আপনি এডিট বা Edit অপশনে প্রবেশ করে আপনার প্রয়োজনীয় তথ্য সংশোধন করে এখানে টাইপ করুন।
  • অর্থাৎ আপনার জাতীয় পরিচয় পত্রের যেসব তথ্য গুলো ভুল ছিল সেই তথ্য গুলো সঠিক ভাবে লিখুন। লেখা হয়ে গেলে সকল তথ্য গুলো ভালো ভাবে দেখে নিন।
  • তারপরে আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় ফি অর্থাৎ, প্রতিটি সংশোধনী ( যেমন- নাম, জন্ম তারিখ) এর জন্য আলাদা আলাদা নির্দিষ্ট পরিমান ফি জমা দিতে হবে মোবাইল ব্যাংকিং ( বিকাশ, নগদ, রকেট) এর মাধ্যমে।
  • ফি দেওয়া হয়ে গেলে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট বা কাগজ পত্র আপনি যেই APP টি ডাউনলোড করেছেন সেখানে জমা দিন।

জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন করতে যেসব কাগজ পত্র বা নথিপত্র প্রয়োজন

জাতীয় পরিচয় পত্র বা ভোটার আইডি কার্ড সংশোধনের জন্য বেশ কিছু কাগজ পত্রের প্রয়োজন। কিন্তু আমরা অনেকেই জানিনা যে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধনের জন্য কোনো কোনো ডকুমেন্ট লাগে। তো এই বিষয় নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কোনো কারন নেই কেননা আজকের আর্টিকেলে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

ভোটার আইডি কার্ড নাম সংশোধন করতে কি কি লাগে 

সাধনত ভোটার আইডি কার্ড সংশোধনের জন্য আপনি কোনো বিষয়টি সংশোধন করতে চাচ্ছেন, তার উপরে ভিত্তি করে কাগজ পত্র বা ডকুমেন্ট গুলো লাগে।
  • এস এস সি, দাখিল বা সমমান সার্টিফিকেট।
  • এইচ এস সি, আলিম বা সমমানের সার্টিফিকেট।
  • ডিটিটাল জন্ম নিবন্ধন সনদের অনুলিপি বা ফটোকপি।
  • পাসপোর্ট বা ড্রাইভিং লাইসেন্স যদি থাকে, তাহলে তার কপি।
  • এমপিও শীট।
  • বিবাহিত হয়ে থাকলে বিবাহ নিবন্ধন সনদ বা কাবিন নামা।
  • পিতা মাতার জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি।
  • মূলত জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধনের জন্য এসব কাগজ পত্র হলে হবে। যেকোনো সংশোধনীর (নাম, জন্ম তারিখ) জন্য এসবই প্রয়োজন।

ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কত দিন লাগে

জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধের জন্য আপনি যদি সকল তথ্য গুলো সঠিক ভাবে দিয়ে থাকেন, তাহলে খুবই দ্রুত আপনার সংশোধনীর হয়ে যাবে। এই ক্ষেত্রে আপনি যদি সকল কাজ সঠিক ভাবে করে থাকেন, তাহলে আবেদনের ১৫ থেকে সর্বচ্চ ২১ দিনের মধ্যে সংশোধনীর কাজ সম্পূর্ণ হয়ে যাবে।

আর আপনার আবদনের সময় কোনো সমস্যা থাকলে সেক্ষেত্রে প্রায় ৬০ দিনের মতো সময় লাগতে পারে। আবার ক্ষেত্র বিশেষে এর বেশি সময় ও লাগতে পারে, তাহলে বুঝতেই পারছেন যে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কত দিন লাগে এ বিষয়ে।

ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কত টাকা লাগে

অনেকেই ভাবতে পারেন হইতো ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কত টাকা লাগে এ বিষয়ে। তবে জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধনী ফি আহামরি নয়। এই ফি আমাদের সাধ্যের মধ্যেই। তবে সংশোধনী ফি এর সাথে ভ্যাট প্রযোয্য। নিম্নে সংশোধনী ফি এর বর্ণনা দেওয়া হল-
  • জাতীয় পরিচয় পত্র তথ্য সংশোধনের জন্য ফি হল- ২৩০ টাকা
  • অন্যান্য তথ্য সংশোধনের জন্য ফি হল- ১১৫ টাকা।
  • যদি উভয় তথ্য সংশোধনীর প্রয়োজন হয়, তাহলে ফি- ৩৪৫ টাকা।
  • রিইস্যুর জন্য প্রযোয্য হল- ৩৪৫ টাকা।
  • জরুরী রিইস্যুর জন্য প্রযোয্য হল- ৫৭৫ টাকা।

জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন চেক করার নিয়ম 

জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন চেক করার নিয়ম হল আপনি চাইলে নির্বাচন অফিসের হেল্প নাম্বারে ফোন কলের মাধ্যমে আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধনের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারবেন। নির্বাচন অফিসের হেল্প নাম্বারটি হল ১০৫। এই নাম্বারে ফোন করে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন। তবে বেশি তথ্য জানতে পারবেন না।
সবচেয়ে ভালো হয় আপনি যদি আপনার নিকস্থ নির্বাচন অফিসে গিয়ে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারেন। এতে করে আপনি একেবারে সঠিক তথ্য গুলো পাবেন খুবই সহজে। আর দেশের পরিস্থিতি যদি স্বাভাবিক থাকে, তাহলে দ্রুত সময়ের মধ্যমে আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধনী হয়ে যাবে।

কিভাবে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করা যায়?

প্রিয় পাঠক, আপনি যদি আজকের আর্টিকেলের উপরে বর্ণিত অংশ গুলো সম্পূর্ণ রূপে পড়ে থাকেন, তাহলে ইতি মধ্যে জেনে গেছেন যে, কিভাবে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করা যায় এ সম্পর্কে বিস্তারিত সকল তথ্য। আর আপনি যদি উপরের অংশ পড়ে না থাকেন, তাহলে অনুগ্রহ করে পড়ে নিবেন।

কিভাবে জাতীয় পরিচয় পত্র চেক করা যায়?

কিভাবে জাতীয় পরিচয় পত্র চেক করা যায় এ সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলের উপরের অংশে আলোচনা করা হয়েছে। সুতরাং আপনি যদি উপরের অংশটি না পড়ে এখানে চলে এসে থাকেন, তাহলে অনুগ্রহ করে বিস্তারিত পড়ে নিবেন।

নতুন ভোটার আইডি কার্ড কিভাবে বের করব?

নতুন ভোটার আইডি কার্ড কিভাবে বের করব এ সম্পর্কে অনেকে প্রশ্ন করে থাকেন, এর উত্তর হল- নতুন ভোটার আই৮ডি কারররড বের করার জন্য আপনাকে সর্ব প্রথম আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটার থেকে services.nidw.gov.bd এই সাইটে প্রবেশ করতে হবে। এর পরে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে যা ইতি পূর্বে জেনেছেন।

তবে রেজিট্রেশনের জন্য জাতীয় পরিচয় পত্র নাম্বার আর নতুন হলে জাতীয় পরিচয় পত্রের জন্য যে স্লিপ আপনাকে দিয়েছিল, সেই নাম্বার দিয়ে রেজিট্রেশন করতে হবে। রেজিস্ট্রেশ্ন সম্পূর্ণ হলে NID WALLET নামের APP এ প্রবেশ করতে হবে এবং সেখানে আপনার মুখমন্ডের বা ফেইসের বর্তমান অবস্থা ক্যামেরার সামনে ধরতে হবে।

আপনার ফেইস ভেরিফিকেশন শেষ হলে আপনি আপনার কাঙ্ক্ষিত ভোটার আইডি কার্ডের অনলাইন কপি খুবই সহজে বের করতে পারবেন।

আইডি কার্ডের বয়স কত বছর কমানো যায়?

আইডি কার্ডের বয়স কত বছর কমানো যায় এ বিষয়ে অনেকে জানতে আগ্রহী, তবে আইডি কার্ডের বয়স কমানোর জন্য অনেক প্রমান পত্র প্রয়োজন হয় এবং প্রমাণ গুলো সঠিক হতে হবে। যেমন জন্ম নিবন্ধনের বয়স, এস এস সি পরীক্ষার সার্টিফিকেট এর সাথে মিল রেখে বয়স কমানো যেতে পারে। কেননা অনেক সময় আইডি কার্ডে ভুল তথ্য আসে।

লেখকের মন্তব্য

আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে ইতিমধ্যে জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন এর নিয়ম জেনেছেন। একই সাথে জাতীয় পরিচয় পত্র সম্পর্কি বিভিন্ন তথ্য জেনেছেন। সুতরাং আপনার যদি জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধনের প্রয়োজন হয় তাহলে আর্টিকেলে বর্ণিত নিয়ম গুলো অনুসরণ করতে পারেন। এতে করে আপনার কাজ দ্রুত হয়ে যাবে।
আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি যদি উপকৃত হয়ে থাকেন, তাহলে অনুগ্রহ করে পরিচিতদের মাঝে শেয়ার করবেন। আর আজকের আর্টিকেলের কোনো তথ্য ভুল প্রমাণিত হলে প্রমাণ সহ আমাদের আমাদের সাথে যোগাযোগ করবেন।

আজকের আর্টিকেলটি সময় নিয়ে সম্পূর্ণ পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আর এরকম নিত্য নতুন বিষয় সম্পর্কে জানতে চাইলে আমাদের ওয়েবসাইট www.kanon24.com নিয়মিত ভিজিট করুন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

কানন২৪ এর নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন।প্রতিটি মন্তব্যের জবাব দেওয়া হয়;

comment url