পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

প্রিয় পাঠক, পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায় এবং কি খেলে পাইলস ভালো হয় এ সম্পর্কে আপনি যদি বিস্তারিত তথ্য জানতে আগ্রহী হয়ে থাকেন এবং একই সাথে একজন স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ হয়ে থাকে কিংবা পাইলের মতো যন্ত্রণাদায়ক জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তাহলে আজকের আর্টিকেলটি শুধু মাত্র আপনার জন্য।
পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায়
এছাড়াও আজকের আর্টিকেলে পাইলস সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য আলোচনা করা হয়েছে। যেমন- পাইলস কেন হয় ? পাইলস হলে করণীয় কি? পাইলস সম্পর্কিত এরকম বিভিন্ন তথ্য আজকের আর্টিকেলে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হয়েছে। সুতরাং সময় ক্ষেপন না করে পাইলস সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য জেনে নিন।

পাইলস

পাইলস খুবই মারাক্ত জটিল একটি সমস্যা। পাইলসের (Hemorrhoids) আরেকটি নাম হল অশ্বরোগ। এটি মূলত মলদ্বারের ভিতরে বা বাহিরে বা নিম্ন স্নায়ুতে ফুসকুড়ির মতো হয়ে থাকে। এই রোগ বিভিন্ন কারনে হয়ে থাকে। বিশেষ করে দীর্ঘ দিন কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যা থাকলে, বংশগত কারনে, গর্ভাবস্থায়। এছাড়াও এই রোগ হতে পারে।

তবে এই রোগটি যেই কারণেই হোক না কেন এটি অনেক যন্ত্রণা দায়ক একটি রোগ। পাইলস হলে মলদ্বারের শিরা গুলো ফুলে যায়, যার ফলে অস্বাভাবিক যন্ত্রণার শিকার হতে হয়। যার কারণে অনেকে টয়লেটে যেতেও ভয় পেয়ে থাকে। কেননা পাইলস হলে মলত্যাগের সময় শুধু যন্ত্রণাও হয় না সেই সাথে রক্ত পাত হয়ে থাকে।

পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায় খাদ্যাভাস পরিবর্তন অথবা সার্জারি। তবে আপনি যদি নিয়ম অনুযায়ী খাদ্যাভাস ঠিক রাখেন এবং একই নিয়মিত প্রতিদিন ব্যায়াম করেন তাহলে এই রোগ দূরে রাখা সম্ভব। আর আপনার জীবনযাত্রার মান ঠিক না থাকে, তাহলে শুধু পাইলস নয় আরও অন্যান্য ভয়াবহ রোগ হতে পারে।
তাই আমাদের সবার উচিত পরিমিত খাদ্য গ্রহণ ও জীবন যাত্রার মান ঠিক রাখা সেই সাথে নিয়মিত ব্যায়াম করা তাহলে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে ফলে সহজে কোনো রোগ আমাদের শরীরে বাসা বাঁধতে পারবেনা। ফলে সুস্থ্য থাকবে আমাদের শরীর।

আজকের আর্টিকেলে পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায় গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। সেই সাথে পাইলস সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য আজকের আর্টিকেলে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। সুতরাং আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে বিস্তারিত তথ্য জেনে নিন।

পাইলসের প্রকারভেদ

পাইলস সাধারনত দুই প্রকার হয়ে থাকে। যেমন-
  • অভ্যান্তরীন পাইলস ও
  • বাহ্যিক পাইলস।

পাইলস হওয়ার কারণ

পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায় গুলো জানার পূর্বে পাইলস এর মতো যন্ত্রণাদায়ক রোগ হওয়ার কারন গুলো সম্পর্কে জেনে নিই-
  • পাইলস হওয়ার অন্যতম কারন হল দীর্ঘদিন ধরে কোষ্ঠকাঠিন্যর মতো সমস্যা থাকলে।
  • পুরাতন আমশয় বা ডাইরিয়ার মতো সমস্যা থাকলে।
  • বংশগত কারনেও পাইলস হয়ে থাকে।
  • আঁশযুক্ত বা ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার পরিমানে কম খাওয়া কারনে।
  • গর্ভকালীন সময়ে।
  • দীর্ঘক্ষণ অতিরিক্ত দাঁড়িয়ে থাকলে।
  • অতিরিক্ত কায়িক পরিশ্রম করলে।
  • অতিরিক্ত ভারি মাল পত্র বহন করলে।
  • পায়ু পথে বা মলদ্বারের মাধ্যমে যৌনক্রিয়ায় লিপ্ত হলে।
  • লিভারের রোগ থাকলে।
  • এগুলোই মূলত পাইলস হওয়ার কারণ। এছাড়াও অনেক কারনে এই রোগটি হতে পারে।

পাইলসের লক্ষণ 

পাইলসের বেশ কিছু লক্ষণ রয়েছ সেগুলো হল-
  • পাইলস বা অশ্বরোগের সাধারণ লক্ষণ
  • পায়ুপথ বা পায়ুপথের আশে পাশে চুলকানি
  • পায়ুপথ বা পায়ুপথের আশেপাশে ব্যথা হয়ে থাকে।
  • পায়পথের চারপাশে শক্ত একটি গলদা হয়ে থাকে।
  • অভ্যান্তরীণ পাইলস বা অশ্বরোগের লক্ষণ
  • মল ত্যাগের সময় জ্বালাপোড়া হতে পারে।
  • মল ত্যাগের সময় অতিরিক্ত চাপ।
  • মল ত্যাগের সময় পায়ুপথ বা পায়ু পথের চারপাশে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব হয়ে থাকে।
  • মল ত্যাগের সময় রক্ত পাত ও হয়ে থাকে।
  • বাহ্যিক পাইলস বা অশ্বরোগের লক্ষণ
  • পায়ুপথের চারপাশে প্রচুর পরিমান চুলকানি।
  • বসার সময় অনেক সময় রক্তপাত হয়ে থাকে।
  • বিভিন্ন সময় সময় মলদ্বার বা পায়ু পথে রক্তক্ষরণ হতে পারে।
  • মলদ্বারের চারপাশ ফুলে যেতে পারে।
  • এছাড়াও বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। মূলত পাইলসের এগুলোই লক্ষণ।

পাইলস থেকে কি ক্যান্সার হয় 

পাইলস হলেই যে ক্যান্সার হবে ব্যাপারটি এরকম কোনো বিষয় নয়। তবে পাইলসের সাথে মলদ্বারের যে যোগ সাধন সেক্ষত্রে ক্যান্সার হতে পারে। বিশেষ করে পাইলসের কারনে দীর্ঘ দিন যাবৎ মল ত্যাগের সময় রক্ত পাত হলে সেই স্থানে ইনফেকশন হতে পারে আর এই ইনফেকশন থেকেই মূলত ক্যান্সারের দিকে ধাবিত হয়।
এছাড়াও ৬০ উর্ধ্ব বয়সী তাদের এই সমস্যা বেশি দেখা দিয়ে থাকে। এর পাইলসের মতো রোগ নিয়ে দীর্ঘ বসে থাকা কখনো উচিৎ নয়। এই সমস্যা দেখা দিলে সাথে সাথে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। তাহলে এই পাইলসের সমস্যা ভালো হয়ে যাবে। আর এতে করে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকিও থাকবেনা। তাহলে বুঝতেই পারছেন যে পাইলস থেকে কি ক্যান্সার হয় এ বিষয়ে।

পাইলস থেকে ক্যান্সার এর লক্ষণ

পাইলসের কারনেই যে মলদ্বারে ক্যান্সার হয়ে থাকে। এছাড়াও বিভিন্ন কারনে মলদ্বারে ক্যান্সর হতে পারে। পাইলস থেকে ক্যান্সার এর লক্ষণ গুলো হল-
  • মলদ্বার থেকে মল ত্যাগের সময় রক্ত ক্ষরণ।
  • পায়ু পথের কাছে বা চার পাশে ব্যথা।
  • মলদ্বারের কাছে চাপ বা পিণ্ড তৈরি হওয়া প্রভৃতি সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • সুতরাং যেকোনো লক্ষণ প্রকাশিত হলে সাথে সাথে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায় 

ব্যায়াম করা: পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায় গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি উপায় হল নিয়মিত প্রতিদিন সর্বনিম্ন ৩০-৬০ মিনিট ব্যায়াম করতে হবে। এতে করে পাইলস হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে।

টয়লেটে সময় কম ব্যয়: টয়লেটে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করা থেকে বিরত থাকতে হবে এবং মল ত্যাগের সময় অতিরিক্ত চাপ দেওয়া যাবেনা। স্বস্তি মেলে এ পরিমান মল ত্যাগ হয়ে গেলে টয়লেট থেকে বের হয়ে আসা উচিৎ।

চা- কফি ও কোমল পানীয়: পাইলসের মতো জটিল রোগ থেকে মুক্তি পেতে হলে চা-কপি বা কোমল পানীয় পান করা থেকে সম্পূর্ণ ভাবে নিজেকে বিরত রাখতে হবে।

গরম পানি: পাইলসের ব্যথা বা প্রদাহ কমাতে গরম পানি দিয়ে গোসল করতে পারেন অথবা এই গরম পানিতে ১০ এর মতো পানি বসে থাকতে পারেন। এতে করে পাইলসের ব্যথা কমে স্বস্থি পাবেন।

এলোভেরা জেল: এলোভেরা জেল খুবই উপকারি। এই জেল আক্রান্ত স্থানে ব্যবহার করলে পাইলের কারনে হওয়া ব্যথা ও জ্বালা পোড়া কমে যায়। সুতরাং পাইলসের প্রদাহ কমাতে আপনি চাইলে এই এলোভেরা জেল ব্যবহার করতে পারে।

কি খেলে পাইলস ভালো হয়

পানি পান করা: পাইলস থেকে বাঁচতে হলে বা পাইলস থেকে মুক্তির জন্য প্রতিদিন নিয়মিত পানি পান করতে হবে। পাইলস হলে এর থেকে মুক্তির জন্য অন্যতম উপায় হল প্রচুর পরিমান পানি পান করা।

ইসুবগুলের ভুসি: পাইলসের সমস্যা মূলত দীর্ঘদিন কোষ্ঠকাঠিন্যর জন্য হয়ে থাকে, সুতরাং আপনি যদি নিয়মিত প্রতিদিন পরিমান মতো ইসুবগুলের ভুসি খেতে পারেন এতে করে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য ও পাইলসের সমস্যা দূর হয়ে যাবে। তবে অতিরিক্ত এই ভুসি খেলে বদ হজমের সমস্যা হতে পারে।

তুলসি পাতা: তুলসি পাতার রস পাইলসের উপশমে খুবই কার্যকর। সুতরাং আপনি যদি পাইলসের উপশম করতে চান তাহলে প্রতিদিন সকালে ১ চা তুলসি পাতার রস খালি পেটে পান করতে পারেন।

আঁশযুক্ত বা ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার: আপনি যদি পাইলসে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তাহলে নিয়মিত প্রচুর পরিমান আঁশযুক্ত বা ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খেতে পারেন, এতে করে আপনার পাইলসের সমস্যা দূর হয়ে যাবে। এই জন্য আপনাকে প্রতিদিন ফলমূল ও শকসবজি খেতে হবে। এতে করে পাইলস থেকে অনেকটাই মুক্তি পাবেন।

পাইলস এর ফোলা কমানোর উপায় 

পাইলস হলে চারপাশে ব্যথার পাশাপাশি ফুলে যায়। এর এই ফোলা কমানোর উপায় হল- আপনাকে পাইলসের উপরে বরফ কিংবা আইস প্যাক ব্যবহার করতে হবে। এতে করে আপনার পাইলসের ব্যথা বা যন্ত্রণা কমে যাবে। পাশাপাশি পাইলসের ফোলাও অনেকটা কমে যাবে।
আরও পড়ুন: জেনে নিন 
তবে ত্বকের ক্ষতি এড়াতে অবশ্যই বরফের টুকরা একটি কাপড় বা তোয়ালে দিয়ে জড়িয়ে ব্যবহার করবেন। এতে করে ত্বকের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে। পাইলস এর ফোলা কমানোর উপায় এটি একমাত্র ঘরোয়া উপায়।

পাইলসের অপারেশনের প্রয়োজনীতা

আপনি পাইলসের লক্ষণ বুঝতে পারার সাথে সাথে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন। এতে করে প্রথম অবস্থায় কিছু ঔষধ পত্র ও আর্টিকেলে বর্ণিত উপদেশ মেনে চললে পাইলস ভালো হয়ে যাতে পারে।আর এতে যদি ভালো না হয় আর দীর্ঘ দিন যদি চিকিৎসাহীন অবস্থায় থাকেন, তাহলে
পাইলসের অপারেশনের প্রয়োজনীতা দেখা দিতে পারে। 
সুতরাং আপনার পাইলস হওয়ার সাথে সাথে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন এবং পরামর্শ গুলো মেনে চলবেন।

কিভাবে অপারেশন ছাড়া পাইলস সমস্যা সমাধান করবেন?

কিভাবে অপারেশন ছাড়া পাইলস সমস্যা সমাধান করবেন এ সম্পর্কে অনেকে জানতে চেয়ে থাকেন- এর উত্তর হল আপনার পাইলস অবস্থা যদি ঔষদের মাধ্যমে সারানো না যায় সেক্ষত্রে অবশ্যই আপনাকে অপারেশন করতে হবে। সুতরাং সতর্ক থাকতে হবে।

পাইলস কিভাবে দূর করা যায়?

পাইলস কিভাবে দূর করা যায় এ সম্পর্কে অনেকে জিজ্ঞাসা করে থাকেন, এর উত্তর আজকের আর্টিকেলের উপরের অংশে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হয়েছে। সুতরাং অনুগ্রহ করে উপরের অংশ পড়ে নিবেন।

শেষ কথা

প্রিয় পাঠক, আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায় সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জেনেছেন। সুতরাং আর্টিকেলে বর্ণিত পরামর্শ মেনে চলুন এতে করে পাইলস থেকে মুক্ত থাকবেন। আর পাইলস হলে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন এবং পরামর্শ গুলো মেনে চলবেন।
আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে উপকৃত হয়ে থাকলে অনুগ্রহ করে পরিচিতদের মাঝে শেয়ার করুন। আর আর্টিকেলের কোনো তথ্য ভুল প্রমাণিত হলে অনুগ্রহ করে উপযুক্ত প্রমাণ পত্র সহ আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।

এরকম নিত্যনতুন তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইট www.kanon24.com নিয়মিত ভিজিট করুন। দীর্ঘ সময় নিয়ে আজকের আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

কানন২৪ এর নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন।প্রতিটি মন্তব্যের জবাব দেওয়া হয়;

comment url