থানাকার উপকারিতা এবং থানাকার ব্যবহার বিধি সম্পর্কে জেনে নিন
প্রিয় পাঠক, থানাকার উপকারিতা এবং থানাকা ক্রিম ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে আপনি যদি জানতে আগ্রহী থাকেন এবং একই সাথে একজন স্বাস্থ্য সচেতন ব্যক্তি হয়ে থাকেন, তাহলে আজকের আর্টিকেলটি শুধু মাত্র আপনার জন্য।
এছাড়াও আজকের আর্টিকেলে অরজিনাল থানাকা চিনার উপায়, এর পার্শ্বপতিক্রিয়া সহ থানাকা সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য আলোচনা করা হয়েছে। সুতরাং সময় ক্ষেপন না করে বিস্তারিত পড়ুন।
ভূমিকা
আমরা তো সবাই চাই আমাদের ত্বক ফর্সা, উজ্জ্বল, মসৃণ ও সতেজ হোক। যার ফলে আমরা বাজার থেকে বিভিন্ন নামিদামী ব্রান্ডের বিভিন্ন ফেসপ্যাক বা প্রসাধুনি কিনে থাকি। কিন্তু সমস্যা নামী দামী ব্রান্ডের আড়ালে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা অসংখ্য ভেজাল পণ্য দিয়ে বাজার ছয়লাপ করে দিয়েছে।
যার ফলে বিভিন্ন পণ্য কিনে আমরা অনেকেই বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় ভুগে থাকি। আর এই ভেজাল পণ্য ব্যবহারের জন্য আমাদের স্কিন ক্যান্সারের মতো ভয়াভহ রোগ হতে পারে। সুতরাং আপনি আপনার ত্বক ফর্সা, উজ্জ্বল, মসৃণ ও সতেজ প্রাকৃতিক ভেষজ ব্যবহার করতে পারেন। এতো আপনার ত্বক ক্ষতি হওয়ার হাত থেকে বেঁচে যাবে।
ত্বক ফর্সা, উজ্জ্বল, মসৃণ ও সতেজ করার জন্য প্রাকৃতিক যত রকমের ভেষজ পাওয়া যায় সেগুলো মধ্যে অন্যতম হল থানাকা। আর এই থানাকা গুড়া তৈরি করা হয়ে থাকে গাছের বাকল থেকে। এর এই থানাকা আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ মায়ানমারে রূপ চর্চার জন্য প্রায় ২০০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
কেননা থানাকা গাছটি মায়ানমারে সবচেয়ে বেশি। সর্বাধিক জনপ্রিয় থানাকা হল মায়ানমারের সাগাইং অঞ্চলের শ্বেবো থানাকা এবং ম্যাগওয়ে অঞ্চলের শিনমাডাউং থানাকা। আর এই থানাকা গাছ প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পরে এই গাছের বাকল থেকে আমাদের কাঙ্খিত থানাকার ফেস প্যাক তৈরি করা হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন: জেনে নিন ত্বক ফর্সা করার ঘরোয়া উপায়।
যা ত্বকের জন্য খুবই উপকারি। আজকের আর্টিকেলে ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য আমাদের পছন্দের থানাকা ক্রিম এর উপকারিতা, অপকারিতা ও ব্যবহারের নিয়ম সহ থানাকা সম্পর্কে সকল ধরনের তথ্য আলোচনা করা হয়েছে আজকের আর্টিকেলে।
থানাকা ক্রিম এর উপকারিতা
থানাকা ক্রিম এর উপকারিতা গুলো হল-
- ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।
- ত্বক সতেজ ও প্রাণবন্তর করে তোলে।
- ত্বকের তৈলাক্তক ভাব দূর করে।
- ত্বকের ব্রণ দূর করে।
- একই সাথে ত্বকের ব্রণের দাগও দূর করে।
- ত্বকের মৃত কোষ দূর করে।
- ত্বকের কালচে ভাব দূর করে দেয়।
- ত্বকের সকল ধরনের দাগ দূর করে।
- ত্বকের মেসতা দূর করে।
- বলি রেখা দূর করে।
থানাকার উপকারিতা
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে: থানাকা আমাদের ত্বকের কালচে ভাব দূর করে দ্রুত আমাদের ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। সুতরাং আপনি যদি আপনার যদি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে চান তাহলে নিয়মিত থানকা ব্যবহার করতে পারে।
ত্বক সতেজ ও প্রাণবন্তর করে তোলে: থানাকাতে প্রচুর পরিমানে বিভিন্ন উপাদানে ভরপুর। যার ফলে নিয়মিত থানাকা ব্যবহার করলে ত্বক সতেজ ও প্রণবন্তর করে তোলে।
ত্বকের তৈলাক্তক ভাব দূর করে: আমাদের মধ্যে অনেকেরই এই তৈলাক্ত ত্বকের সমস্যা রয়েছে। সুতরাং আপনিও যদি এই সমস্যায় ভুগে থাকেন, তাহলে নিয়মিত থানাকা ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে আপনার ত্বকের তৈলাক্তক ভাব সহজেই দূর হয়ে যাবে।
ত্বকের ব্রণ দূর করে: থানাকা ত্বকের ব্রণ দূর করে এবং একই সাথে ত্বকের ব্রণের দাগও দূর করে। কেননা থাকাতে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি প্রোপার্টিজ রয়েছে। যার ফলে আমাদের ত্বকের সকল প্রকার ব্রণ দূর করে খুবই দ্রুত এবং একই সাথে ত্বকের ব্রণের দাগও দূর করে থাকে।
সুতরাং আপনি যদি আপনার ত্বকের ব্রণের মতো সমস্যা দূর করতে চান এবং একই সাথে ত্বকের ব্রণের দাগও দূর করতে চান, তাহলে নিয়মিত থানাকা ব্যবহার করতে পারেন।
ত্বকের মৃত কোষ দূর করে: থানাকাতে বিভিন্ন উপাদানের জন্য আমাদের ত্বকে যে মৃত কোষ থাকে, নিয়মিত থানাকা ব্যবহার করলে ত্বকের মৃত কোষ দূর করে ত্বককে আরও বেশি উজ্জ্বল, মসৃণ, সতেজ ও ফর্সা করে তোলবে।
ত্বকের কালচে ভাব দূর করে দেয়: আমাদের মধ্যে অনেকেরই ত্বকের কালচে ভাব রয়েছে। আর আপনি যদি এই সমস্যায় ভুগে থাকেন, তাহলে নিয়মিত থানাকা ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে আপনার ত্বকের কালচে ভাব দ্রুত দূর হয়ে যাবে।
ত্বকের সকল ধরনের দাগ দূর করে: থানাকাতে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি প্রোপার্টিজ রয়েছে, যার ফলে আমাদের ত্বকের সকল ধরনের দাগ খুবই দ্রুতই দূর হয়ে যাত। সুতরাং আপনি যদি ত্বকের দাগের সমস্যায় ভুগে থাকেন, তাহলে নিয়মিত এই থানাকা ব্যবহার করতে পারেন।
ত্বকের মেসতা দূর করে: অনেকেই ত্বকে মেসতার মতো জটিল সমস্যায় ভুগে থাকেন। আর আপনিও যদি এই সমস্যায় ভুগে থাকেন, তাহলে নিয়মিত এই থানাকা ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে আপনার ত্বকের মেসতা দ্রুতই দূর হয়ে যাবে।
বলি রেখা দূর করে: অনেকের বয়সের আগে বয়সের ছাপ পড়ে বা বলি রেখা পড়ে। আর আপনিও যদি এই সমস্যায় ভুগে আর এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে চান, তাহলে নিয়মিত থানাকা ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে আপনার ত্বকের বয়সের ছাপ বা বলি রেখা দূর করে ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখবে।
থানাকা ফেস প্যাক এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
থানাকার মূলত তেমন কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। কেননা এইটি একটি প্রাকৃতিক ভেষজ। তাই বলে যে সব সময় মেখে বসে থাকবেন, এটি কিন্তু উচিৎ হবে না। সুতরাং এই উপকারী প্রাকৃতিক ভেষজ পরিমান মতো নিয়মিত ব্যবহার করতে হবে। তবে থানাকা কিনার সময় অবশ্যই জেনে বুঝে তারপরে কিনবেন। কেননা বাজারে নকল পণ্যের অভাব নেই।
থানাকা ফেস প্যাক আসল নকল চেনার উপায়
অনেকেই এখন ভাবছেন যে ভেজাল পণ্যের মধ্যে আসল পণ্য কিভাবে কিনবেন তাই তো? তাহলে চলুন জেনে নিই থানাকা ফেস প্যাক আসল নকল চেনার উপায় গুলো সম্পর্কে-
- অরজিনাল থানার প্যাকেটে যে ডেট থাকবে, সেটা স্পষ্ট ভাবে লেখা থাকবে। আর নকল থানাকার প্যাকেটের ডেট কিছুটা অস্পষ্ট থাকবে।
- অরজিনাল থানাকা দেখতে কিছুটা চন্দনের মতো আর নকল থানাকা দেখতে কিছুটা হলুদের মতো।
- আরজিনাল থানাকা সাবানের মতো শক্ত হবে। আর নকল বা ভেজাল থানাকা কিছুটা নরম বা লিকুইডের মতো হবে।
- আর আপনি যদি বুঝতে না পেরে নকল পণ্য কিনেই ফেলেন তাহলে দুই একবার ব্যবহার করলে আপনার ত্বক দেখলে বুঝতে পারবেন। অনেক সময় কালচে হতে পারে আবার অনেক সময় বিভিন্ন র্যাস বের হতে পারে।
- সুতরাং আপনি যেখান থেকেই পণ্য কিনুন না কেন অবশ্যই দেখে শুনে তারপরে কিনবেন।
থানাকা ক্রিম ব্যবহারের নিয়ম
থানাকা বেশ কিছু নিয়ম কানুন মেনে ব্যবহার করলে এর থেকে বেশি উপকারিতা পাওয়া যায়। তাহলে চলুন জেনে নিই থানাকা ক্রিম ব্যবহারের নিয়ম গুলো সম্পর্কে-
- থানাকা ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই আপনার ত্বক ভালো মতো ধুয়ে নিতে হবে। আপনি চাইলে পানি অথবা গোলাপ জল দিয়ে ধুয়ে নিতে পারেন।
- এর পরে থানাকা চামচ দিয়ে সামন্য পরিমান নিয়ে সেখানে সামান্য পরিমান পানি মিশ্রণ করে প্যাক তৈরি করে নিতে হবে। এর এই মিশ্রটি আপনার ত্বকে ভালোভাবে লাগাতে হবে।
- আপনার ত্বক যদি শুষ্ক হয়ে থাকে তাহলে ৫-১০ মিনিট রেখে ভালোমতো পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে পারে।
- আর আপনার ত্বক যদি তৈলাক্তক হয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই এই প্যাকটি আপনার ত্বকে ১০ থেকে ১৫ মিনিট দিয়ে রাখতে হবে। তারপরে পরিষ্কার পানি দিয়ে ভালো মতো ধুয়ে নিতে হবে।
- থানাকা আমাদের ত্বকের জন্য খুবই উপকারি। তাই থানাকা সপ্তাহে সর্বচ্চ ১-৫ বার ব্যবহার করতে পারেন। তবে ১-২ দিনই ব্যবহার করা ভালো।
- আর এই থানাকার প্যাক সরাসরি স্নানস্কিন হিসাবে ব্যবহার করতে পারেন।
থানাকা ফেস প্যাক রিভিউ
প্রিয় পাঠক, আর্টিকেলের উপরের অংশ পড়ে ইতি মধ্যে জেনেই গেছেন যে, এই থানাকার ফেসপ্যাক কতটা উপকারি। আর এই থানাকার ফেস প্যাক নিয়মিত ব্যবহার করলে আপনার ত্বক সুন্দর, মসৃণ, উজ্জ্বল ও সতেজ হবে। থানাকা ফেস প্যাক রিভিউ দেওয়ার মতো আর কিছুই নেই। নিজে ব্যবহার করে ফলাফল দেখুন।
থানাকা কি দিয়ে তৈরি
অনেকেই জিজ্ঞাসা করে থাকেন যে, থানাকা কি দিয়ে তৈরি এ সম্পর্কে- থানাকা মূলত প্রাপ্ত বয়স্ক থানাকা গাছের বাকল দিয়ে তৈরি করা হয়ে থাকে। আর এই থানাকা গাছটি মায়ানমারে হয়ে থাকে।
থানাকা ফেস প্যাক কি প্রতিদিন ব্যবহার করা যাবে
থানাকা ফেস প্যাক কি প্রতিদিন ব্যবহার করা যাবে এ সম্পর্কেও অনেকে প্রশ্ন করে থাকেন। এর উত্তর হল যে, থানাকা সপ্তাহে ৪-৫ বার ব্যবহার করা উচিৎ। তবে সপ্তাহে ১-২ দিন থানাকার প্যাকটি ব্যবহার করায় ভালো।
থানাকা ফেস প্যাক এর কাজ কি
থানাকা ফেস প্যাক এর কাজ কি এ সম্পর্কেও অনেকেই জানতে চেয়ে থাকেন, এর উত্তর হল- ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখা। ত্বককে ভিতর থেকে উজ্জ্বল, সুন্দর, মসৃণ ও সতেজ করে।
থানকা ফেসপ্যাক কি ত্বকের জন্য ভালো
থানকা ফেসপ্যাক কি ত্বকের জন্য ভালো- হ্যাঁ। থানাকা ফেসপ্যাকটি অবশ্যই ভালো।
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে থানাকার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে সকল তথ্য জেনেছেন। সুতরাং আপনি যদি আপনার ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে চান, ত্বকে উজ্জ্বল, সুন্দর, মসৃণ ও সতেজ রাখতে চান, তাহলে নিয়মিত থানাকা ব্যবহার করতে পারেন।
আজকের আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপন যদি উপকৃত হয়ে থাকেন, তাহলে অনুগ্রহ করে পরিচিতদের মাঝে শেয়ার করুন। আর আজকের আর্টিকেলের কোনো তথ্য ভুল মনে হলে সঠিক তথ্য প্রমাণ সহ আমাদের অবশ্যই জানাবেন।
আবশেষে আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ্য রূপে পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আর প্রতিনিয়ত এরকম নিত্যনতুন তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইট www.kanon24.com ভিজিট করুন।
কানন২৪ এর নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন।প্রতিটি মন্তব্যের জবাব দেওয়া হয়;
comment url