বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সংক্ষিপ্ত জীবনী ও সাহিত্যকর্ম
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সংক্ষিপ্ত জীবনী ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম ও মৃত্যু সাল সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হয়ে থাকেন, তাহলে আজকের আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ আপনার জন্য।
সেই সাথে আজকের আর্টিকেলে আলোচনা করা হয়েছে বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনী এবং একই সাথে আলোচনা করা হয়েছে তাঁর রচয়িতা সাহিত্যকর্ম, কর্ম কর্মজীবন সহ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পর্কে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ। তাহলে সময় ক্ষেপণ না করে করে জেনে নিন বিস্তারিত সকল তথ্য।.
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সংক্ষিপ্ত জীবনী
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এক বিষ্ময়কর প্রতিভার নাম। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে কবি গুরু বলা।তিনি সাহিত্যের এমন কোনো শাখা-প্রশাখা নেই যে, যেখানে তিনি পদাচরণা করেননি।তিনি সাহিত্যের সকল অঙ্গে সমান ভাবে পদাচরণা করেছেন। সেই সাথে রেখেছেন বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদান।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে সাহিত্যে সাগরের সাথে তুলনা করা হই। তিনি বাংলা সাহিত্য করেছেন আরো বেশি সমৃদ্ধ। তিনি একাধারে কবি,উপন্যাসিক,প্রাবন্ধিক,নাট্যকার,গল্পকার,সঙ্গীতজ্ঞ, লেখক এবং শিক্ষাবিদ ইত্যাদি। কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলি কাব্যের জন্য প্রথম কোনো এশিয়া মহাদেশের ব্যক্তি নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন।
সেই সাথে বাংলাদেশ এবং ভারতে জাতীয় সংগীত রচনা করেন তিনি। আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সংক্ষিপ্ত জীবনী ও তাঁর রচিত সাহিত্য কর্ম গুলো নিয়ে আজকের আর্টিকেলে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ৭ই মে ১৮৬১ সালে ব্রিটিশ শাসন আমলে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোলকাতায় বিখ্যাত জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়িতে জন্ম গ্রহণ করেন।
বংশ পরিচয়: কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতামহ বা দাদার নাম হল- প্রিন্স দ্বারাকানাথ ঠাকুর। তাঁর পিতার নাম- মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং মাতার নাম- সারদা দেবী এই দম্পত্তির ১৫ জন সন্তান। নয় জন ছেলে সন্তান ও ছয় জন মেয়ে সন্তান । রবি ঠাকুরের ১৫ জন ভাই বোনের মধ্যে তিনি ১৪ তম। রবিঠাকুরের স্ত্রীর নাম- মৃনালিনী দেবী ।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছদ্মনাম: ভানুসিংহ ঠাকুর। তাঁর সর্বমোট ৯টি ছদ্মনাম আছে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ডাক নাম: রবি।
শিক্ষাজীবন: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পারিবারিক ভাবে বিভিন্ন গৃহ শিক্ষকের কাছে পড়াশোনা করেছেন। সেই সাথে তিনি বাল্যকালে ওরিয়েন্টাল সেমিনারি, নির্মাল স্কুল, বেঙ্গল একাডেমি, সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুলসহ প্রভৃতি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ন করলেও স্কুলের পাঠ শেষ করতে পারেননি।
পরবর্তীতে তিনি ব্যারিস্টারি পড়ার জন্য মাত্র ১৭ বছর বয়সে বিলেতে গমন করেন। কিন্তু সেখানেও তিনি তাঁর পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সংক্ষিপ্ত জীবনীর মধ্যে শিক্ষাজীবন অন্যতম।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম ও মৃত্যু সাল
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ৭ই মে ১৮৬১ সাল (২৫ বৈশাখ, ১২৬৮ বঙ্গাব্দে) কোলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। এবং তিনি ৮০ বছর বয়সে ৭ আগস্ট ১৯৪১ সাল ( ২২ শ্রাবণ ১৩৪৮ বঙ্গাব্দে) মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর সমাধিস্থল- কোলকাতা।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কর্মজীবন
কর্ম জীবন: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর পিতার নির্দেশে ১৯৮৪ সালে বিষয়কর্ম পরিদর্শনে নিযুক্ত হন। এই পরে তিনি ১৮৯০ সাল থেকে তিনি দেশের বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে ঘুরে জমিদারি দেখাশুনা শুরু করেন। এই ধারাবাহিকতায় তিনি বাংলাদেশের কুষ্টিয়ার শিলাইদহ, নওগাঁর আত্রায় পতিশহর ও সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে দীর্ঘদিন অবস্থান করেন এবং এসব স্থানে বসে তিনি সাহিত্য রচনায় মনোনিবেশ করেন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাব্যগ্রন্থ তালিকা
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যেসমস্ত কাব্যগ্রন্থ রচনা করেছেন, সেগুলো হল অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাব্যগ্রন্থ তালিকা হল-
সূচনা পর্ব-(১৮৭৮-১৮৮১)
- কবি কাহিনি (১৮৭৮)
- বনফুল (১৮৮০)
- ভগ্নহৃদয়
উম্মেষ পর্ব- (১৮৮২-১৮৮৬)
- সন্ধ্যা সঙ্গিত (১৮৮২)
- প্রভাত সঙ্গিত (১৮৮২)
- শৈশব সঙ্গিত (১৮৮৩)
- ছবি ও গান (১৮৮৪)
- ভানু সিংহ ঠাকুরের পদাবলী (১৮৮৪)
- কড়ি ও কমল (১৮৮৬)
ঐশ্বর্য পর্ব- (১৮৯০-১৯০০)
- মানসী (১৮৯০)
- সোনার তরী (১৮৯৪)
- নদী (১৮৯৬)
- চিত্রা (১৮৯৬)
- চৈতালি (১৮৯৬)
- কণিকা (১৯০০)
- কথা ও কাহিনি (১৯০০)
- কল্পনা(১৯০০)
- ক্ষণিকা(১৯০০)
অন্তবর্তী পর্ব- (১৯০১-১৯২৯)
- নৈবেদ্য (১৯০১)
- স্মরণ (১৯০৩)
- শিশু (১৯০৩)
- উৎসর্গ (১৯০৪
- খেয়া (১৯১০)
- গীতাঞ্জলি (১৯১০)
- গীতিমাল্য (১৯১৪)
- গীতালি (১৯১৫)
- বলাকা (১৯১৬)
- পলাতকা (১৯১৮)
- শিশু ভোলানাথ (১৯২২)
- পূরবী (১৯২৫)
- লেখন (১৯২৭)
- মহুয়া (১৯২৯)
শেষ পর্ব (১৯৩০-১৯৪১)
- বনবাণী (১৯৩১)
- পরিশেষ (১৯৩২)
- পুনশ্চ (১৯৩৩)
- বিচিত্রা (১৯৩৩)
- শেষ সুপ্তক (১৯৩৫)
- বিথীকা (১৯৩৫)
- পত্রপুট (১৯৩৬)
- শ্যামলী (১৯৩৬)
- খাপছাড়া (১৯৩৭)
- ছড়ার ছবি (১৯৩৭)
- প্রান্তিন (১৯৩৮)
- সেজুতি (১৯৩৮)
- প্রহাসিনী (১৯৩৮)
- আকাশ প্রদীপ (১৯৩৯)
- নবজাতক (১৯৪০)
- সানাই (১৯৪০)
- রোগশয্যায় (১৯৪০)
- আরোগ্য (১৯৪১)
- জন্মদিনে (১৯৪১)
- শেষলেখা (১৯৪১)
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপন্যাসের নাম
সাহিত্যের অন্যান্য শাখার মতো রবিঠাকুর উপন্যাসে রচনা করেছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপন্যাসের নাম গুলো হল-
- বৌ-ঠাকুরাণীর হাট (১৮৮৩)
- রাজর্ষি (১৮৮৭)
- চোখের বালি (১৯০৩)
- নৌকাডুবি (১৯০৬)
- প্রজাপতির নির্বন্ধ (১৯০৮)
- গোরা (১৯১০)
- ঘরে বাইরে (১৯১৬)
- চতুরঙ্গ (১৯১৬)
- যোগাযোগ (১৯২৯)
- শেষের কবিতা (১৯২৯)
- দুই বোন (১৯৩৩)
- মালঞ্চ (১৯৩৪)
- চার অধ্যায় (১৯৩৪)
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটকের নাম
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সাহিত্য রচনা ধারায় তিনি বেশ কিছু বিখ্যাত নাটক ও রচনা করেছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটকের নাম গুলো হল-
- রুদ্রচণ্ড (১৮৮১)
- প্রকৃতির প্রতিশোধ (১৮৮৪)
- নলিনী (১৮৮৪)
- রাজা ও রাণী (১৮৮৯)
- তপতী (১৯২৯)
- বিসর্জন (১৮৯০)
- মালিনী (১৮৯৬)
- লক্ষ্মীর পরীক্ষা (১৮৯৯)
- শারদোৎসব (১৯০৮)
- মুকুট –(১৯০৮)
- প্রায়শ্চিত্ত (১৯০৯)
- রাজা (১৯১০)
- ডাকঘর (১৯১২)
- অচলায়তন (১৯১২)
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবন্ধের নাম
রবি ঠাকুর বাংলা সাহিত্যের ধারায় বেশ কিছু প্রবন্ধ রচনা করেছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবন্ধের নাম গুলো হল
- য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র (১৮৮১)
- বিবিধ প্রসঙ্গ (১৮৮৩)
- আলোচনা (১৮৮৫)
- সমালোচনা (১৮৮৮)
- মন্ত্রি-অভিষেক (১৮৯০)
- য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি (১৮৯১)
- পঞ্চভূত (১৮৯৭)
- ঔপনিষদ ব্রহ্ম (১৯০১)
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উল্লেখযোগ্য পুরষ্কার
ইতিমধ্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সংক্ষিপ্ত জীবনী সম্পর্কে অনেক তথ্য জেনে গেছেন। তাহলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উল্লেখযোগ্য পুরষ্কার সম্পর্কে জেনে নিন-
- বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এশিয়া মহাদেশের প্রথম ব্যক্তি যিনি "গীতাঞ্জলি" এর জন্য ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কার পান।
- এরপরে কবিগুরকে ১৯৩৫ সালে ব্রিটিশ ক্রাউন দ্বারা নাইটহুডও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে জলিয়ানওয়ালাবাগ ঘটনার পরে, ৩০ মে ১৯১৯ সালে তিনি তাঁর নাইটহুড উপাধি নিজ ইচ্ছায় ত্যাগ করে দিয়েছিলেন।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে ১৯৪০ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় শান্তিনিকেতনে অনুষ্ঠিত একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে ডক্টরেট অফ সাহিত্যের সম্মানীত করেন।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মৃত্যুর পরবর্তী সময়ে ১৯৬১ সালের ৭ই মে তার জন্মদিন উপলক্ষে ভারতীয় ডাক বিভাগ পক্ষ থেকে সম্মান জ্ঞাপন উদ্দেশ্যে তাঁর ছবি দিয়ে একটি ডাক টিকেট প্রকাশ করা হয়।
বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পর্কে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সংক্ষিপ্ত জীবনী ধারাবাহিকতায় জেনে নিন বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পর্কে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-
- বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯১০ সালে গীতাঞ্জলি কাব্য রচনা করেন এবং ১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলি কাব্যের জন্য তিনি প্রথম কোন ব্যক্তি হিসেবে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন এবং গীতাঞ্জলির ইংরেজি অনুবাদ সম্পাদনা করেছেন ডব্লিউ বি ইয়েটস।
- বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে বিশ্বকবি সম্মানে ভূষিত করেন ব্রাহ্মবান্ধব উপাধ্যায়।
- বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রথম কবিতার নাম হল অভিলাষ কবিতাটি 1874 সালের তত্ত্বাবধানে পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয়।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রথম প্রকাশিত উপন্যাসের নাম হল বউ ঠাকুরানীর হাট।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রথম গীতিনাট্য হল বাল্মীকি প্রতিভা প্রকাশিত হয় ১৮৮১ সালে।
- রবীন্দ্রনাথের প্রথম লেখা ছোট গল্পটি হল ভিখারিনী।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার রচিত বসন্ত নাটকটি কাজী নজরুল ইসলামকে উৎসর্গ করেছিলেন।
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক আজকের আর্টিকেলটি সম্পূর্ণরূপে করার মাধ্যমে ইতিমধ্যে জেনে গেছেন যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সংক্ষিপ্ত জীবনী এবং তার সাহিত্যকর্ম সম্পর্কে বিস্তারিত সকল তথ্য। সাথে আরো জেনেছেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কর্মজীবনকর্মজীবন সহ বিভিন্ন তথ্য।
প্রিয় পাঠক আজকের আর্টিকেলটি সকল তথ্য বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও বই পত্র থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে আর্টিকেলের কোন অংশ যদি আপনার কাছে ভুল বলে মনে হয় সেক্ষেত্রে অবশ্যই প্রমাণসহ যোগাযোগ করবেন এবং সেই সাথে আজকের আর্টিকেলটি ধৈর্য সহকারে পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
আরও পড়ুন: জেনে নিন চাকরির জন্য সিভি লেখার নিয়ম।
সেই সাথে আজকের আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন, তাহলে অবশ্যই আর্টিকেলটি আপনার পরিচিত জনদের সাথে শেয়ার করুন। যেন তারাও আপনার মত উপকৃত হতে পারে। যে কোন বিষয়ে সব ধরনের আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইট www.kanon24.com সঙ্গে থাকুন ধন্যবাদ
কানন২৪ এর নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন।প্রতিটি মন্তব্যের জবাব দেওয়া হয়;
comment url