শ্বেতী রোগ থেকে মুক্তির উপায় গুলো জেনে নিন
প্রিয় পাঠক, শ্বেতী রোগ থেকে মুক্তির উপায় এবং শ্বেতী রোগ কেন হয় এ সম্পর্কে আপনি যদি জানতে আগ্রহী হয়ে থাকেন এবং একই সাথে একজন স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ হয়ে থাকেন তাহলে আজকের আর্টিকেলটি শুধুমাত্র আপনার জন্য।
সেই সাথে শ্বেতী রোগ সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য আজকের আর্টিকালে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। সুতরাং সময় ক্ষপণ না করে আজকের আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
ভূমিকা
শ্বেতী বা ধবল রোগ এটি এক প্রকার ত্বক বা স্কিনের রোগ। এই রোগের ইংরেজি নাম হল লিউকোডারমা বা ভিটিলিগো। আমাদের মধ্যেই অনেকই আছেন যারা শ্বেতী বা ধবল রোগে আক্রান্ত কোনো ব্যক্তিকে দেখলে আঁতকে উঠেন এবং এড়িয়ে চলেন। কেননা অনেকেই মনে করে থাকেন যে এই রোগ হইতো বা ছোঁয়াচে।
আরও পড়ুন: জেনে নিন রাসেল'স ভাইপার কামড়ালে করণীয়।
আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে শ্বেতী রোগ থেকে মুক্তির উপায় সহ শ্বেতী বা ধবল রোগ নিয়ে বিভিন্ন ধরনের তথ্য আলোচনা করা হয়েছে।
শ্বেতী বা ধবল রোগ
এই শ্বেতী বা ধবল রোগ হওয়ার মূল কারন হল আমাদের ত্বকের মধ্যে মেলানোসাইট নামক কোষে থাকে মেলানিন নামক একধরনের পদার্থ, যা আমাদের শরীরের ত্বকের স্বাভাবিক রঙের ভারসাম্য রক্ষা করে থাকে। আর এই মেলানিনের কার্যক্ষমতা কমে গেলে বা এর ক্রিয়া কালাপে বাঁধা সৃষ্টি হলে বা এর ভারসাম্য নষ্ট হয়ে গেলে এই ধবল বা শ্বেতী রোগ দেখা দিয়ে থাকে।
শ্বেতী রোগ কেন হয়
শ্বেতী রোগ কেন হয় এই বিষয়ে অনেকেই জানতে আগ্রহী হয়ে থাকেন। আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে এই বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। মূলত শ্বেতী বা ধবল বেশ কিছু কারনে হয়ে থাকে। যেমন-
শ্বেতী রোগ হওয়ার প্রথম কারন হল: আমাদের ত্বক ও চুলের রঙ মেলানিনে কারনে স্বাভাবিক হয়ে থাকে বা ভারসাম্য বজায় থাকে। কিন্তু যখন এই মেলানিন নষ্ট বা ধ্বংস অথবা মেলানিন উৎপাদনকারী কোষগুলো মারা যায় বা কাজ করা বন্ধ করে দিয়ে থাকে, তখন আমাদের ত্বকে এই শ্বেতী রোগ দেখা দেয়।
শ্বেতী রোগ হওয়ার দ্বিতীয় কারন হল: আমরা অনেকেই বিভিন্ন ধরনের প্রসাধনী ত্বকে ব্যবহার করে থাকি, এর মধ্যমে অনেক প্রসাধনী আছে যেগুলো আমাদের ত্বকের বিভিন্ন কোষগুলো মেরে ফেলে অর্থাৎ মেলালিন উৎপাদানকারী ত্বক ধ্বংস করে দিয়ে থাকে। যার ফলে শ্বেতী বা ধবল রোগ হয়ে থাকে।
শ্বেতী রোগ হওয়ার তৃতীয় কারন হল: শ্বেতী রোগ অনেক সময় বংশগত কারনে হয়ে থাকে। এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, প্রতি ১০০ জন শ্বেতী রোগী বা ধবল রোগীর মধ্যে প্রায় ৩০ জন শ্বেতী রোগীর এই রোগ হয়েছে বংশগত কারনে। এছাড়াও বিভিন্ন কারনে এই রোগ হয়ে থাকে।
শ্বেতী রোগ চেনার উপায়
শ্বেতী রোগ বা ধবল রোগ যেকোনো বয়সের ব্যক্তিরই হতে পারে। অনেকেই মনে করে থাকেন যে ত্বকের উপরে হয়তো যেকোনো ধরনের সাদা দাগই হইতো বা শ্বেতী বা ধবল রোগের লক্ষণ। কিন্তু ত্বকের উপরের সব সাদা রঙ ই শ্বেতী রোগের লক্ষণ নয়। শ্বেতী রোগের বেশ কিছু লক্ষণ বা শ্বেতী রোগ চেনার উপায় রয়েছে। তা হল-
- প্রাথমিকভাবে শ্বেতী রোগের লক্ষণ হল- মুখে, হাতে, বাহুতে, যৌনঙ্গের আশেপাশে, নিতম্ব বা শরীরের বিভিন্ন খোলা অংশে বিক্ষিপ্তভাবে ছোট ছোট সাদা দাগ দেখা দিয়ে থাকে।
- অনেক সময় মুখ এবং নাকের মিউকাস মেমব্রেনে রঙের প্রলেপ উঠে যেতে পারে।
- এছাড়াও দুই চোখের মাঝখানে, ভ্রু, মাথার চামড়ায় এবং দাঁড়িতে এই রোগের উপসর্গ দেখা দিতে পারে। যার ফলে অনেক সময় চুল ও দাঁড়ি ফ্যাকাশে রঙের হয়েও যেতেও পারে।
শ্বেতী রোগ থেকে মুক্তির উপায়
শ্বেতী রোগ সম্পর্কে আমরা ইতিমধ্যে অনেক তথ্য জেনেছি। তাহলে চলুন এখন জেনে নিই যে, প্রাকৃতিক ভাবে শ্বেতী রোগ থেকে মুক্তির উপায় গুলো সম্পর্কে-
অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা: আপনি যদি শ্বেতী বা ধবল রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তাহলে আপনাকে অবশ্যই অতিরিক্ত চিন্তা থেকে দূরে থাকতে হবে। কেননা অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করার কারনে শ্বেতী বা ধবল রোগ ত্বকে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়াও অতিরিক্ত মানসিক চাপ আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয়।
যার ফলে যেকোনো রোগ সহজেই আমাদের শরীরে আক্রামন করে থাকে। সুতরাং আপনি যদি ধবল বা শ্বেতী রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তাহলে অতিরিক্ত চিন্তা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কেননা সঠিক চিকিৎসা নিলে এই রোগ দ্রুত সেরে উঠে। শ্বেতী রোগ থেকে মুক্তির উপায় গুলোর মধ্যে এটি একটি।
হলুদের গুড়া ও সরিষার তেলের মিশ্রণ: শ্বেতী বা ধবল রোগের চিকিৎসায় প্রাচীনকাল থেকে হলুদের গুড়া এবং সরিষার তেলের মিশ্রণ ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সুতরাং আপনি যদি শ্বেতী রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তাহলে এই মিশ্রণটি ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে আপনার রোগটি ভালো হয়ে যাবে। এটি একটি শ্বেতী রোগ থেকে মুক্তির উপায়।
তুলসী পাতা বা পুদিনা পাতা: শ্বেতী রোগ থেকে মুক্তির জন্য আপনি চাইলে প্রথমে তুলসী পাতা বা পুদিনা পাতা পিষে বা ব্লেন্ড করে নিতে পারেন। এর পরে লেবুর রস নিয়ে ভালোভাবে মিশ্রণ করে পেস্ট তৈরি করে নিতে হবে। সর্বশেষ পেস্টটি শ্বেতী আক্রান্ত স্থানে ভালোভাবে ঘোষতে হবে। এতে করে দ্রুত ফলাফল পাবেন। শ্বেতী রোগ থেকে মুক্তির উপায় গুলোর মধ্যে এটি অন্যতম।
নিয়মিত পানি পান: আপনি ত্বকের যেকোনো ধরনের রোগে ভুগে থাকেন, তাহলে অবশ্যই পরিমান মতো নিয়মিত বেশি বেশি পানি পান করবেন। এতে করে আপনার সকল প্রকার ত্বকের সমস্যা দূর করতে সহায়তা করবে। সুতরাং আপনি যদি শ্বেতী রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে বেশি বেশি পানি পান করতে পারেন।
মদ্য পান বা মাদক সেবন থেকে বিরিত থাকতে হবে: আপনি যদি শ্বেতী ধবল রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তাহলে আপনাকে অবশ্যই মদ্যপান বা মাদক জাতীয় দ্রব্য সেবন করা থেকে বিরত থাকতে হবে। তানাহলে শ্বেতী বা ধবল রোগের প্রোকপ বেড়ে যাবে।
খাবার সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে: আপনি যদি শ্বেত রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তাহলে আপনাকে অবশ্যই খাবার সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন থাকতে হবে। কেননা বেশ কিছু ধরনের খাবার আছে যেগুলো খেলে শ্বেতী বা ধবল রোগের সংক্রামন বেড়ে যায়। আবার কিছু খাবার আছে যেই খাবার গুলো গ্রহণ করলে শ্বেত রোগের প্রকোপ কমতে শুরু করে।
শ্বেতী রোগের খাবার
বেশ কিছু খাবার আছে যেগুলো গ্রহণ করার মাধ্যমে শ্বেতী বা ধবল রোগের প্রকোপ অনেকাংশে কমে যায়। শ্বেতী রোগের খাবার গুলো হল-
- আখরোট,
- অ্যাভোকাডো,
- তরমুজ,
- পালং শাক,
- করলা,
- বিট,
- গাজর,
- মুলা,
- মাশরুম,
- কলা,
- আপেল,
- পেয়ারা,
- ভিটামিন এ জাতীয় খাবার
- ভিটামিন সি জাতীয় খাবার
- ভিটামিন ই জাতীয় খাবার
- ভিটামিন ডি জাতীয় খাবার
এসব খাবারের মাধ্যমে শ্বেতী রোগের প্রকোপ অনেকাংশে কমানো সম্ভব। সুতরাং আপনি যদি শ্বেতী বা ধবল রোগের আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তাহলে অবশ্যই উপরে বর্ণিত খাবারগুলো বেশি বেশি করে খাবেন।
শ্বেতী রোগ হলে কি কি খাওয়া যাবে না
শ্বেতী রোগ হলে বেশ কিছু খাবার থেকে দূরে থাকতে হবে। তাহলে চলুন জেন নিই শ্বেতী রোগ হলে কি কি খাওয়া যাবে না এ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য গুলো-
- দই,
- মাছ,
- সিফুড,
- কমলালেবু,
- বেড মিটস,
- বেগুন,
- আঙুর,
- বেদানা,
- পিয়ারা,
- কাঁচা টমেটো,
- কাঁচা রসুন,
- কফি,
- চকোলেট,
- তেঁতুল
- মদ পান
- এসব খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকলে ধবল বা শ্বেতী রোগের প্রকোপ কমানো সম্ভব।
শ্বেতী রোগ কি ছোঁয়াচে
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা শ্বেতী রোগে আক্রান্ত কোনো ব্যক্তিকে দেখলে তার থেকে দূরে দূরে থাকেন এবং একই সাথে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। কেননা তারা মনে করেন যে এই শ্বেতী বা ধবল রোগ হইতো বা ছোঁয়াচে একটি রোগ যার জন্য অনেকেই শ্বেতী বা ধবল রোগে আক্রান্ত কোনো ব্যক্তিকে দেখলে এড়িয়ে চলে।
কিন্তু বহু দিন ধরে চলে আসা ধারণা টি সম্পূর্ণ ভুল একটি ধারণা। কেননা শ্বেতী বা ধবল রোগ কোনো প্রকার ছোঁয়াচে রোগ নয়। সুতরাং শ্বেতী বা ধবল রোগী দেখে আতঙ্কিত বা ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আর ই রোগ সঠিক চিকিৎসা করলে দ্রুত ভালো হয়ে যায়। তাহলে ব্বুঝতেই পারছেন যে শ্বেতী রোগ কি ছোঁয়াচে কিনা।
শ্বেতী রোগের ছবি
শ্বেতী রোগ কি ভালো হয়
অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন যে, শ্বেতী রোগ কি ভালো হয় এ সম্পর্কে। প্রিয় পাঠক শ্বেতী বা ধবল রোগের সঠিক চিকিৎসা করালে অবশ্যই দ্রুত ভালো হয়ে যায়। সুতরাং আপনি যদি শ্বেতী বা ধবল রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তাহলে দেরি না করে অবশ্যই দ্রুত একজন বিশেষজ্ঞ চিকৎসকের পরামর্শ নিন। এতে করে আপনি দ্রুত সুস্থ্য হয়ে যাবেন।
শরীরের চামড়া মাঝে মাঝে সাদা হয়ে যায় কেন
অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন যে, শরীরের চামড়া মাঝে মাঝে সাদা হয়ে যায় কেন এ সম্পর্কে। শরীরে চামড়া সাদা হওয়া কিন্তু ধবল বা শ্বেতী রোগ নাও হতে পারে। সুতরাং আপনার ত্বকে যদি এরকম কোনো সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে তাহলে দ্রুত একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
অ্যালোভেরা কি শ্বেত রোগের চিকিৎসা করতে পারে
আপনারা অনেকেই অনেক সময় প্রশ্ন করে থাকেন যে, অ্যালোভেরা কি শ্বেত রোগের চিকিৎসা করতে পারে এ সম্পর্কে। এর উত্তর হল হ্যাঁ অবশ্যই অ্যালোভেরা দিয়ে এই শ্বেতী বা ধবল রোগের চিকিৎসা করা যায়।
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক, আজকের আর্টিকেলটি বিস্তারিত ভাবে পড়ার মাধ্যমে ইতিমধ্যে শ্বেতী রোগ থেকে মুক্তির উপায় গুলো সম্পর্কে জেনে গেছেন। সেই সাথে আরো জেনেছেন শ্বেতী রোগ সম্পর্কে অনেক তথ্য। সুতরাং আপনি যদি শ্বেতী রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তাহলে অবশ্যই দেরি না করে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
আরও পড়ুন: জেনে নিন সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ।
আজকের আর্টিকেলটি অনেক সময় নিয়ে ধৈর্য ধরে পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আজকের আর্টিকেলে কোন তথ্য যদি আপনার কাছে ভুল বলে মনে হয় তাহলে অবশ্যই সঠিক তথ্য প্রমাণসহ আমাদেরকে সাথে যোগাযোগ করবেন।
সেই সাথে আজকের আর্টিকেলটি যদি পড়ার মাধ্যমে উপকৃত হয়ে থাকেন, তাহলে অবশ্যই আজকের আর্টিকেলটি আপনার পরিচিতদের মাঝে শেয়ার করুন। আর এরকম নিত্য নতুন সকল ধরনের তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইট www.kanon24.com নিয়মিত ভিজিট করুন ধন্যবাদ।
কানন২৪ এর নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন।প্রতিটি মন্তব্যের জবাব দেওয়া হয়;
comment url