খালি পেটে চিরতা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম
খালি পেটে চিরতা খাওয়ার উপকারিতা ও চিরতা খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে যদি আপনি জানতে আগ্রহী হন এবং স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হয়ে থাকেন, তাহলে আজকের আর্টিকেলটি শুধু মাত্র আপনার জন্য।
সেই সাথে চিরতা সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলে বিস্তারিত সকল তথ্য আলোচনা করা হয়েছে। সুতরাং সময় ক্ষেপন না করে চলুন জেনে নিই আজকের বিষয়বস্তু সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।.
চিরতার উপকারিতা
চিরতা খুবই উপকারি একটি ভেষজ উদ্ভিদ। এটি বিভিন্ন ধরনের রোগ সারাতে এবং বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ করতে বিশেষ গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে এই চিরতা। এই ভেষজ উদ্ভিদটি বিভিন্ন রোগ ভালো করতে প্রাচীনকাল থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কেননা চিরতা ঔষধি গুণাগুণ সম্পূর্ণ একটি ভেষজ উদ্ভিদ।
চিরতার আয়ুর্বেদিক নাম কিরাততিক্তা। এটি স্বাদে খুবই তিতো একটি ভেষজ। এটি স্বাদে তেতো হলেও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এর জুড়ি নেই। এমনি চিরতো নিয়মিত খেলে তারুণ্য ধরে রাখে। এছাড়াও এই ভেষজটি আমাদের জ্বর ও চর্ম রোগসহ বিভিন্ন রোগ সারাতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
আজকের আর্টিকেলে খালি পেটে চিরতা খাওয়ার উপকারিতা এবং চিরতা খাওয়ার সকল নিয়ম গুলো সম্পর্কে সহ চিরতা সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের তথ্য আলোচনা করা হয়েছে।সুতরাং চিরতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আজকের আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ুন। চিরতার উপকারিতা হল-
- জ্বর ভালো করে
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
- লিভার ভালো রাখে
- ওজন কমাতে সহায়তা করে
- রক্ত পরিষ্কার করে
- কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
- হৃদ রোগের ঝুকি কমায়
- তারুন্য ধরে রাখে
- রক্তশূণ্যতা দূর করে
- পচা ঘা সারাতে সাহয্য করে
- চুলকানি দূর করে
- কৃমি দূর করে
- চুল ঝরে পড়া রোধ করে
- ত্বক ভালো রাখে।
খালি পেটে চিরতা খাওয়ার উপকারিতা
জ্বর ভালো করে: চিরতা জ্বর সারাতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। ঋতু পরিবর্তনের জন্য অনেক
সময় আমাদের জ্বর, সর্দি ও কাশিসহ ঠান্ডা জনিত রোগ বৃদ্ধি পায়। ফলে গা হাত পা চিবায় বা কামড়ায়। এরকম পরিস্থিতিতে উত্তরণের জন্য আপনি চাইলে চিরতা খেতে পারেন। তাহলে আপনার জ্বর বা ঠান্ডা জনিত সমস্যা দ্রুত দূর হয়ে যাবে।
আরও পড়ুন: জেনে নিন পুরুষের জন্য মেথির গোপন উপকারিতা।
এর জন্য আপনাকে প্রথমে ৫-১০ গ্রাম চিরতা নিতে হবে। তারপরে ৪ কাপ পানিতে সিদ্ধ করে ২ কাপ থাকতে নামিয়ে ঠাণ্ডা করতে হবে। এরপরে তা ভালো ভাবে ছেঁকে সকালে অর্ধেক ও বিকালে অর্ধেক পান করতে হবে। এভাবে নিয়মিত কয়েকদিন চিরতা খেলে জ্বরসহ ঠান্ডা জনিত বিভিন্ন রোগ দ্রুত ভালো হয়ে যাবে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে: আপনি যদি অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের সমস্যায় ভুগে থাকেন তাহলে নিয়মিত চিরতা ভেজানো পানি পান করতে পারেন। কেননা চিরতা ডায়াবেটিল রোগীদের জন্য খুবই উপকারি। কারন চিরতা আমাদের রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে থাকে। ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ হয়ে যায়।
সুতরাং আপনি যদি ডায়াবেটিসের সমস্যায় ভুগে থাকেন, তাহলে নিয়মিত চিরতা ভেজানো পানি পান করতে পারেন। এতে করে আপনার ডায়াবেটিসের মতো কঠিন রোগ ও দ্রুত নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে: নিয়মিত চিরতা খেলে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দ্রুত বৃদ্ধি করে থাকে। কেননা আমাদের শরীরের যেকোনো রোগ দ্রুত সেরে উঠার জন্য আমাদের শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেম ভালো রাখার প্রয়োজন পড়ে।
সুতরাং আপনি যদি আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে চান বা ইমিউন সিস্টেম বা অনাক্রম্যতা বৃদ্ধি করতে চান, তাহলে নিয়মিত চিরতা ভেজানো পানি পান করতে পারেন। তাহলে দ্রত আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। এটিই খালি পেটে চিরতা খাওয়ার উপকারিতা উপকারিতা গুলোর মধ্যে অন্যতম।
লিভার ভালো রাখে: চিরতা লিভারের বিভিন্ন সমস্যার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে থাকে। কেননা চিরতা লিভারের টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে থাকে। ফলে লিভার ভালো থাকে। এছাড়াও লিভারের অনেক সমস্যা গুলো দূর করতে সাহায্য করে থাকে এই ভেষজ চিরতা।
ওজন কমাতে সহায়তা করে: আপনি যদি অতিরিক্ত ওজেনের সমস্যায় ভুগে থাকেন, তাহলে নিয়মিত চিরতা ভেজানো পানি পান করতে পারেন। কেননা চিরতা ওজন কমাতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। দ্রুত ওজন কমাতে চিরোতা খুবইত কার্যকারী। সুতরাং দ্রুত ওজন কমাতে চাইলে নিয়মিত চিরতা ভেজানো পানি পান করতে পারেন।
রক্ত পরিষ্কার করে: নিয়মিত চিরতা খেলে আমাদের রক্ত পরিষ্কার করতে সহায়তা করে থাকে। কেননা চিরতা আমাদের শরীরের রক্তের খারাপ ব্যাকটেরিয়া দূর করে থাকে এবং একই সাথে রক্ত পরিষ্কার করে। সুতরাং আপনি আপনার শরীরের রক্ত ভালো রাখতে চাইলে চিরতা খেতে পারেন। এটিই খালি পেটে চিরতা খাওয়ার উপকারিতা।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে: আপনি যদি কোষ্ঠকাঠিন্যর মতো জটিল সমস্যায় ভুগে থাকেন, তাহলে নিয়মিত চিরতা ভেজানো পানি পান করতে পারেন। কেননা চিরতা কোষ্ঠকাঠিন্যর মতো জটিল ও কঠিন সমস্যা সহজেই দূর করতে সহায়তা করে থাকে। এটিই খালি পেটে চিরতা খাওয়ার উপকারিতা গুলোর মধ্যে অন্যতম।
হৃদ রোগের ঝুকি কমায়: হার্ট ভালো রাখতে নিয়মিত চিরতা খেতে পারেন। কেননা চিরতাতে থাকা উপাদান আমাদের হার্ট ভালো রাখতে যথেষ্ঠ সহায়তা করে থাকে এবং সেই সাথে স্ট্রোকের ঝুঁকিও বহুগুণ কমিয়ে দেয়। সুতরাং আপনি যদি আপনার হার্ট ভালো রাখতে চান এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে চান, তাহলে নিয়মিত চিরতা খেতে পারেন।
তারুন্য ধরে রাখে: আপনি যদি আপনার তারুন্যকে ধরে রাখতে চান, তাহলে নিয়মিত চিরতা ভেজানো পানি পান করতে পারেন। কেননা চিরতাতে রয়েছে শক্তিশালী আন্টি অক্সিডেন্ট যা বার্ধক্যকে বিলম্বতি করে তারুন্য ধরে রাখে। সুতরাং তারুণ্য ধরে রাখতে চাইলে নিয়মিত চিরতা ভেজানো পানি পান করতে পারেন।
রক্তশূণ্যতা দূর করে: আপনি যদি রক্তশূন্যতাএ মতো সমস্যায় ভুগে থাকেন, তাহলে চিরতা ভেজানো পানি পান করতে পারেন। কেননা চিরতা রক্তশণ্যতা দূর করতেবিশেষ ভূমিকা রাখে। সুতরাং নিয়মিত চিরতা খেলে রক্তশূণ্যতাদূর হয়ে যাবে।
কৃমি দূর করে: আপনি যদি কৃমির সমস্যায় ভুগে থাকেন, তাহলে নিয়মিত চিরতা ভেজানো পানি পান করতে পারেন। কেননা চিরতা কৃমির মতো জটিল সমস্যা নিমিষেই দূর করতে সাহায্য করে।
পচা ঘা সারাতে সাহয্য করে: শরীরের কোনো স্থানে ঘা হয়ে সেখানে পচন ধরে গেছে অথচ কোনো ভাবেই ভালো হচ্ছে না, তাহলে রাতে ৫গ্রাম চিরতা গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। এরপর সেই পানি ছেকে নিন। তারপর পচনকৃত ঘা ভালোভাবে ধুয়ে নিন।এভাবে ১সপ্তাহ করলেই দেখবেন পচনকৃত ঘা অনেকটাই শুকিয়ে গেছে।
চুলকানি দূর করে: চুলকানি অসহ্য একটি সমস্যা। এই চুলকানি থেকে পরিত্রান পেতে হলে ২০ গ্রাম চিরতাতে সামান্য পরিমান পানি ছিটিয়ে নিতে হবে। তারপর লোহার তাওয়া ১০০গ্রাম সরিষার তেল দিয়ে ভালোভাবে ফুটিয়ে নিতে হবে, এরপর তেল ফেনা মুক্ত হলে তাতে চিরতা দিতে হবে।
এরপর ভালোমতো ভাজতে হবে তবে পুড়ে যেন না যায়। ভাজা হয়ে গেলে ছেকে নিতে হবে। তারপর এই তেল চুলকানিকৃত জাইগায় অল্প পরিমাণ ম্যাসাজ করলেই দ্রুত চুলকানি সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
চুল ঝরে পড়া রোধ করে: অনেক সময় দেখা যায় অনেক কারনেই আমাদের মাথার চুল ঝরে পড়ে।আর এই চুল ঝরে পড়া রোধ করতে রাতে এক কাপ গরম পানিতে ৫ গ্রাম চিরতা ভিজিয়ে রেখে পরদিন সেই পানি ছেঁকে তা দিয়ে মাথা ধুয়ে ফেললে চুল ওঠা কমবে।
একদিন পর পর একদিন এভাবে চিরতার পানি দিয়ে মাথা ধুতে হবে। ৩-৪ বার এভাবে ধুতে পারলে চুল ওঠা অনেক কমে যাবে। সুতরাং আপনি যদি আপনার চুল ঝরে পড়া রোধ করতে চান, তাহলে চিরতা ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে দ্রুত ফলাফল পাবেন।
ত্বক ভালো রাখে: চিরতা শরীরের ত্বক ভালো রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত চিরতা খেলে বয়সের ছাপ দূর করে দেই। সুতরাং ত্বক ভালো রাখার জন্য নিয়মিত চিরতা ভেজানো পানি পান করতে পারেন।
চিরতা খাওয়ার অপকারিতা
প্রতিটি জিনিসের উপকারিতার সাথে বেশ কিছু অপকারিতাও আছে।ঠিক তেমনি চিরতার অপকারিতা বা পার্শপতিক্রিয়া আছে। যেমন-
- গর্ভবতী এবং স্তন্যদায়ী মায়েদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শের পরেই চিরতা ব্যবহার করা উচিত।
- অনেকেই এর অত্যন্ত তিক্ত স্বাদের কারণে বমি করে ফেলেন বা বমিভাব দেখা দেয়।
- ডায়াবেটিসের রোগীদের এটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা উচিত। বা ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
চিরতা কতদিন খাওয়া যায়
অনেকেই জানতে চান যে এক টানা চিরতা কতদিন খাওয়া যায় এ সম্পর্কে। তাহলে চলুন জেনে নিই এ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। চিরতা এক টানা ১০-১৫ দিনের বেশি খাওয়া উচিৎ নয়। কেননা অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়। সেটা যত উপকারিই হোক না কেন।
চিরতা খাওয়ার নিয়ম
- চিরতার ডাল বা পাতা রাতে ভিজিয়ে সকালে খালি পেটে চিরতা ভেজানো পানি ছেকে নিয়ে খেতে হবে।
- চিরতা পাতার রস পান করতে পারেন। এটি তেতো, তাই এতে মধু যোগ করা যেতে পারে। এটিই চিরতা খাওয়ার নিয়ম।
চিরতা কি কিডনির ক্ষতি করে
চিরতা খুবিই উপকারি একটি ভেষজ হওয়া সত্ত্বেও বেশ কিছু সময় ক্ষতির কারনও হতে পারে। চিরতা কিছু সময় কিডনি জন্য ভালো আবার খারাপও। কেননা চিরতায় অ্যালকালয়েড নামক উপাদান থাকে, যা কিডনির ক্ষতি করতে পারে। আবার চিরতায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদানও থাকে, যা কিডনির ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে পারে।
অতিরিক্ত চিরতা খেলে ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা ঘটাতে পারে, যা কিডনির ক্ষতি করতে পারে। আবার চিরতা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে, যা কিডনির ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে পারে। তাহলে বুঝতেই পারছেন চিরতা কি কিডনির ক্ষতি করে এ সম্পর্কে।
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক, আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে ইতিমধ্যে জেনে গেছেন খালি পেটে চিরতা খাওয়ার উপকারিতা সহ চিরতা সম্পর্কে বিস্তারিত সকল তথ্য। সুতরাং উপরে বর্ণিত যেকোনো সমস্যা থেকে উত্তোরণের জন্য নিয়মিত চিরতা খেতে পারেন। তবে আপনার সমস্যা যদি জটিল হয়ে থাকে তাহলে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।
আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ রূপে ধৈর্য সহকারে পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আজকের আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে যদি আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন, তাহলে অনুগ্রহ করে পরিচিতদের মাঝে শেয়ার করে দিবেন। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের তথ্য পেতে আমাদের ওয়েব সাইট www.kanon24.com নিয়মিত ভিজিট করুন। ধন্যবাদ।
কানন২৪ এর নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন।প্রতিটি মন্তব্যের জবাব দেওয়া হয়;
comment url