রাঙ্গামাটি দর্শনীয় স্থান সমূহ জেনে নিন
রাঙ্গামাটি দর্শনীয় স্থান সমূহ সম্পর্কে আপনি জানতে ও ভ্রমণ করতে আগ্রহী হন, তাহলে আজকের আর্টিক্যালটি শুধু মাত্র আপনার জন্য। এছাড়াও রাঙ্গামাটি ভ্রমণের উপযুক্ত সময় সম্পর্কে আমি আপনাকে বিস্তারিত সকল তথ্য জানানোর চেষ্টা করব।
সেই সাথে রাঙ্গামাটি ভ্রমণের সকল বিষয় নিয়ে বিস্তারিত ভাবে বিভিন্ন ধরেনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে আজকের এই আর্টিক্যালে। সুতরাং সময় ক্ষেপন না করে চলুন জেনে নেই বিস্তারিত তথ্যগুলো সম্পর্কে ।
ভূমিকা
বাংলাদেশের পার্বত্য জেলা গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি জেলা ও বৃহত্তম জেলা হল রাঙ্গামাটি। এই রাঙ্গামাটিকে লাল পাহাড়ের দেশ ও বলা হয়। এখানে রয়েছে প্রায় ১১ টি জনগোষ্ঠির নিজেস্ব সংস্কৃতি সেই সাথে রয়েছে স্বচ্ছ জলের বুকে ভেসে পাহাড়ের নৈস্বর্গিক প্রাকৃতিক রূপ যা ভ্রমণ পিপাসুদের মুগ্ধ করে প্রতিটি মুহূর্তে।
এখানে সবুজ পাহাড়ের বুক চিরে নেমে আসে ঝর্ণাধারা অপরূপ সৌন্দর্য এবং সেই সাথে রয়েছে কাপ্তাই লেকের নৈস্বররগিক অপরূপ সৌন্দর্য যা সবাইকে মগ্ধ করে। এ জেলার উত্তরে ভারতের ত্রিপুরা, দক্ষিণে পার্বত্য বান্দরবন জেলা, পূর্বে ভারতের মিজোরাম রাজ্য ও মায়ানমারের চিন প্রদেশ এবং পশ্চিমে পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলা ও চট্রগ্রাম জেলা।
এর রূপ বৈচিত্র একেক ঋতুতে একেক রকমের বৈচিত্র ফুটিয়ে তুলে। তবে সবচেয়ে বেশী আকর্ষনীয় হয়ে উঠে বর্ষাকালে। সেই সাথে এখানে আপনি দেখতে পাবেন অরণ্যে ঘেরা পাহাড় আর মেঘের নৈস্বর্গিক অপরূপ মিলন মেলা সেই সাথে রয়েছে পাহাড়ী আঁকাবাঁকা রাস্তার সৌন্দর্য যা আপনাকে করবে বিমোহিত।
এক সময় এই রাঙ্গামাটিতে প্রচুর পরিমাণে কার্পাস তুলা পাওয়া যেত এবং সেই সেই কর্পাস তুলার নাম অনুসারে রাঙ্গামাটি জেলার পূর্বের নাম ছিল কর্পাসমহল। তবে বর্তমান এই রাঙ্গামাটি জেলার প্রকৃতির রঙ, রূপ, সৌন্দর্য ও বৈচিত্রের জন্য রূপের রাণী বলা হয়ে থাকে।
রাঙ্গামাটি দর্শনীয় স্থান সমূহ
বাংলাদের পার্বত্য জেলা গুলোর মধ্যে অন্যতম হল এই রাঙ্গামাটি জেলা। এই রাঙ্গামাটি জেলার প্রাকৃতিক রঙ, রূপ, সৌন্দর্য ও বৈচিতে আপনাকে প্রতিটি মুহুর্তে বিমোহিত করবে। রাঙ্গামাটি দর্শনীয় স্থান গুলো হল-
- সাজেক ভ্যালি,
- কর্ণফুলী হ্রদ,
- কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের স্পিলওয়ে,
- পর্যটন মোটে,
- ঝুলন্ত সেতু,
- শুভলং ঝর্ণা,
- শুকনাছড়া ঝর্ণা,
- ধুপপানি ঝর্ণা,
- মুপ্পোছড়া ঝর্ণা,
- পেদা টিং টিং,
- টুকটুক ইকো ভিলেজ,
- রাইখং লেক
- এছাড়াও অসংখ্য দর্শনীয় স্থান রয়েছে।
সাজেক ভ্যালি
রাঙ্গামাটির দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে সবচেয়ে অন্যতম ও জনপ্রিয় সেই সাথে ভ্রমণ পিপাসুদের কেন্দ্র বিন্দু হল এই সাজেক ভ্যালি। এই সাজেক ভ্যালি হল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক নৈস্বর্গিক অপরূপ নীলা ভূমি। এটি রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায় সাজেক ইউনিয়নে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৮০০ ফুঁট উচ্চতায় অবস্থিত।
সাজেক ভ্যালি রাঙামাটি জেলায় অবস্থিত হলেও সাজেক ভ্যালিতে ভ্রমণে যাতয়াত সুবিধার জন্য খাগড়াছড়ি সদর দিয়ে সাজেকে যাওয়া আসা করে। কেননা খাগড়াছড়ি সদর থেকে সাজেক ভ্যালির দূরত্ব প্রায় ৭০ কি.মি.।
সুতরাং আপনি একজন ভ্রমণ পিপাপু মানুষ হয়ে থাকলে অবশ্যই এই রাঙ্গামাটি দর্শনীয় স্থান সমূহ, সবচেয়ে সুন্দরতম স্থান এই সাজেক ভ্যালিতে ভ্রমন করা উচিৎ।
কাপ্তাই দর্শনীয় স্থান
রাঙ্গামাটি জেলার সুন্দরতম স্থান গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি স্থান হল কাপ্তাই হ্রদ বা লেক। এটি একটি কৃত্রিম হ্রদ বা লেক। পানি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের জন্য ১৯৫৬ সালে কর্ণফুলি নদীর উপরে কাপ্তাই বাঁধ নিমার্ণ করা হয়। এর ফলে আশে পাশে প্রায় ৫৪ হাজার একর জমি পানির নিচে ডুবে যাওয়ার ফলে সৃষ্টি হয় এই কাপ্তায় হ্রদ বা লেকের।
আরও পড়ুন: জেনে নিন সিলেটের দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে।
এই কাপ্তায় লেকের নৈস্বর্গিক পাকৃতিক রঙ, রূপ, সৌন্দর্য ও বৈচিত্র আপনাকে মুগ্ধ করবে। কেননা এখানে আপনি নদী,বন বা গহিণ অরণ্য, পাহাড়, ঝর্ণাধারা ও জীববৈচিত্রের এক অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবে। যার মাধ্যমে আপনার ভ্রমণের ক্লান্তি এবং মানসিক চিন্তা নিমিষেই দূর হয়ে যাবে।
সুতরাং আপনি একজন ভ্রমণ পিপাসু মানুষ হয়ে থাকলে অবশ্যই কাপ্তায় হ্রদে ভ্রমণ করা উচিৎ। কেননা রাঙ্গামাটি জেলার দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে অন্যতম হল কাপ্তাই দর্শনীয় স্থান ।
কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের স্পিলওয়ে: পানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ১৯৫৬ সালে কর্ণফুলি নদীর উপরে বাঁধ দেওয়ার ফলে আশে পাশের প্রায় ৫৪ হাজার একর জমি পানির নিচে ডুবে যাওয়ার ফলে সৃষ্টি হয় এই কাপ্তায় হ্রদ বা লেকের।
সুতরাং আপনি চাইলে এই কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের স্পিলওয়ে থেকে ঘুরে আসতে পারেন। কেননা এটি রাঙ্গামাটি দর্শনীয় স্থান সমূহ গুলোর মধ্যে অন্যতম।
ঝুলন্ত সেতু: রাঙ্গামাটি দর্শনীয় স্থান সমূহ গুলোর মধ্যে অন্যতম হল এই ঝুলন্ত ব্রীজ। ভ্রমণ পিপাসু মানুষদের কাছে এই ব্রীজের বিশেষ একটি আকর্ষণ রয়েছে। যার ফলে এই সিম্বল অফ রাঙ্গামাটি হিসেবে খ্যাত ঝুলন্ত সেতু বা ব্রীজের অপরূপ সৌন্দর্যের জন্য উপভোগের জন্য পর্যটকরা বার বার ছুটে আসে এখানে।
এই ব্রীজ কাপ্তাই হ্রদ বা লেকের উপরে নির্মিত এবং এর আয়তন প্রায় ৩৩৫ ফুঁট লম্বা । এই ব্রীজ থেকে কাপ্তাই লেকের ও এর চারপাশের সৌন্দর্য আপনাকে বিমোহিত করবে।
শুভলং ঝর্ণা: রাঙ্গামাটি জেলার বরকল উপজেলায় অবস্থিত শুভলং ঝর্ণা। এটি রাঙ্গামাটি সদর থেকে প্রায় ২৫ কি.মি. দূরে অবস্থিত। এই ঝর্ণার রঙ, রূপ, সৌন্দর্য ও বৈচিত্র আপনাকে নিমিষেই মুগ্ধ করবে। কেননা এই ঝর্ণার পানি প্রায় ৩০০ ফুঁট উপরে থেকে স্বচ্ছ জলধারা নিয়ে আঁচড়ে পড়ে এবং কাপ্তাইয়ের জলে মিশে যায়।
শুকনাছড়া ঝর্ণা: রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নে এই শুকনাছড়া ঝর্ণা অবস্থিত। এই ঝর্ণার আরও একটি নাম হল হাজাছড়া ঝর্ণা এছাড়া স্থানীয় আদিবাসীরা চিত জুরানি থাংঝাং ঝর্ণা বলে থাকে। এই ঝর্ণা আপনি চাইলে সাজেক ভ্রমণের সময় দেখতে পারেন। এই ঝর্ণার রঙ, রূপ, সৌন্দর্য আপনাকে বিমোহিত করবে।
ধুপপানি ঝর্ণা: রাঙ্গামাটি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলার ফারুয়া ইউনিয়নে ওড়াছড়ি নামক স্থানে এই ধুপপানি ঝর্ণা অবস্থিত। এই ঝর্ণার স্বচ্ছ জল জলধারা পাথরের গা ঘেষে প্রায় ১৫০ ফুঁট উঁচু থেকে তীব্র গতিতে নিচে আঁচড়ে পড়ে। এর জলধারার জন্য চারপাশে ধোয়াশা সৃষ্টি করে থাকে। রাঙ্গামাটি দর্শনীয় স্থান সমূহ গুলোর মধ্যে অন্যতম।
মুপ্পোছড়া ঝর্ণা: রাঙ্গামাটি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলায় অবস্থিত। এটি প্রস্থের দিক দিয়ে বাংলাদেশের অন্যতম একটি বড় ঝর্ণা। এই ঝর্ণার অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে আপনাকে নৌ-পথে কাপ্তায় লেকের উপর দিয়ে ভেসে ভেসে যেতে হবে। তাহলেই আসল রঙ, রূপ, সৌন্দর্য ও বৈচিত্র উপভোগ করতে পারবেন।
কমলক ঝর্ণা: রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নে অবস্থিত কমলক ঝর্ণা। কমলক ঝর্ণার সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে আপনাকে রুইলুই পাড়া থেকে প্রায় দুই থেকে আড়াই ঘন্টার মতো পথ আপনাকে পাড়ি দিতে হবে।
সাজেক ভ্যালির পাহাড় ও মেঘের মিলন মেলা সৌন্দর্য উপভোগ করার পাশাপাশি কমলাক ঝর্ণার সৌন্দর্য আপনাকে আরো রোমাঞ্চকর অনুভূতি দিবে।
পেদা টিং টিং: রাঙ্গামাটি সদর থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে কাপ্তায় হ্রদ বা লেকের বুকে শির উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা একটি পাহাড়ে অবস্থিত এই পেদা টিং টিং। এর অর্থ হচ্ছে পেট টান টান অথবা অরিরিক্ত খাওয়ার পরে পেটের যে টান টান অবস্থা থাকে। এখানে একটি সেগুন বাগানকে পর্যটন কেন্দ্র করা হয়েছে।
এখানে স্থানীয় বেশ কিছু জনপ্রিয় খাবার পাওয়া যায়। যেমন- কচি বাঁশের তরকারি, কেবাং, বিগল বিচিসহ নানা রকমের জনপ্রিয় সব খাবার পাওয়া যায় এখানে।
রাইখং লেক: রাঙ্গামাটি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলার বড়থলি ইউনিয়নে প্রায় সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২৫০০ ফুঁট উঁচুতে রাইখং লেক অবস্থিত। এই লেকের পাড়ে ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী বসবাস করে থাকে। এই রাইখং লেকে অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবে।
রাঙ্গামাটি ভ্রমণের উপযুক্ত সময়
রাঙ্গামাটির প্রাকৃতিক রঙ, রূপ, সৌন্দর্য ও বৈচিত্র একেক ঋতু একেক রূপে নিজেকে সাজায়। পাহাড়, অরণ্য,নদী, ঝর্ণা ও লেকের নীলাভ স্বচ্ছ পানির অপরূপ সৌন্দর্য সব ঋতুতে নিজেকে মেলে ধরে নিত্যনতুন রূপে ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে। প্রকৃতির মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলেতে চাইলে যেকোনো সময় রাঙ্গামাটি ভ্রমণ করতে পারেন।
রাঙ্গামাটি কিসের জন্য বিখ্যাত
লালপাহাড়ের দেশ হিসেবে খ্যাত রাঙ্গামাটি মূলত প্রাকৃতিক রঙ, রূপ, সৌন্দর্য ও বৈচিত্রে জন্য বিখ্যাত। আপনি যদি নিজেকে প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে ফেলতে চান এবং সকল মানসিক চিন্তা দূর করতে চান তাহল রাঙ্গামাটিতে ভ্রমণ করতে পারেন।
এছাড়াও এখানে পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র, কর্ণফুলি কাগজ কল সহ বিভিন্ন কারনে বিখ্যাত। তাহলে বুঝতেই পারছেন রাঙ্গামাটি কিসের জন্য বিখ্যাত।
রাঙামাটির বিখ্যাত খাবার
- বাঁশের কোড়ল
- মুরগীর গুঁতাইয়া
- হাঙর শুটকি
- গুটি বেগুন
- এঁচোড় নিরামিষ
- বিন্নি চালের ভাত
- বিন্নি চালের ভাঁপা পিঠা
- মুরগী ভর্তা
- সবজি সিদ্ধ
- আনারস
- মিষ্টি তেতুল
- পাহাড়ি কলা
- কুইচা মাছ
- কাকড়া ইত্যাদি। এসবই রাঙামাটির বিখ্যাত খাবার।
লেখকের মন্তব্য
প্রিয় পাঠক, আপনি যদি আর্টিক্যালটি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়ার মাধ্যমে ইতি মধ্যে রাঙ্গামাটি দর্শনীয় স্থান সমূহ সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য বিস্তারিত ভাবে জেনেছেন। সুতরাং আপনি যদি একজন ভ্রমণ পিপাসু মানুষ হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই লালপাহাড়ের দেশ রাঙ্গামাটি ভ্রমণ করা উচিৎ বলে মনে করি।
এই আর্টিক্যালটি পড়ার মাধ্যমে যদি আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অনুগ্রহ করে আপনার পরিচিতদের নিকট অনুগ্রহ করে শেয়ার করে দিবেন। তাহলে তারাও আপনার মতো উপকৃত হতে পারবে। এতো কষ্ট ,ধৈর্য ও আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে আর্টিক্যালটি সম্পূর্ণভাবে পড়ার জন্য এবং শেয়ার করার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।
আর আপনি যদি সকল বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য জানতে চান তাহলে আমাদের ওয়েবসাইটি নিয়মিত ভিজিট করুন। ধন্যবাদ।
কানন২৪ এর নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন।প্রতিটি মন্তব্যের জবাব দেওয়া হয়;
comment url