খালিদ বিন ওয়ালিদ এর জীবনী-অপরাজেয় সমর নায়ক
খালিদ বিন ওয়ালিদ এর জীবনী নিয়ে আজকের আর্টিকেলে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়াও খালিদ বিন ওয়ালিদ নাম রাখা যাবে কি যাবে কিনা এই সম্পর্কে বিস্তারিত সকল তথ্য আমি আপনাকে জানানোর চেষ্টা করব। সুতরাং আপনি যদি মুসলমানদের ইতিহাস ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আজকের আর্টিকেলটি শুধু মাত্র আপনার জন্য।
সেই সাথে খালিদ বিন ওয়ালিদ কেন ইতিহাসে বিখ্যাত এসকল বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য নিয়ে আজকের আর্টিকেলে আলোচনা করা হয়েছে। সুতরাং সময় ক্ষেপন না করে চলুন জেনে নিই সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিস্তারিত সকল তথ্য।
ভূমিকা
একজন অপারাজেয় সেনাপতি হিসেবে ইতিহাসে খ্যাত খালিদ বিন ওয়ালিদ ( রা.)। তিনি ছিলেন এমন এক মহাবীর যার নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনী প্রায় ১০০ টিরও বেশি যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিলেন এবং কোনো যুদ্ধেই পরাজয় বরণ করেননি এবং সেই সাথে যুদ্ধক্ষেত্রে নিজের মেধা শক্তি ও শারীরিক শক্তি দিয়ে ইসলামের পতাকা উড়িয়েছে সারা বিশ্বে।
তিনি সর্বদাই হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছে মহান আল্লাহ তা'লার সত্ত্যদিন প্রতিষ্ঠার জন্যে। তিনি তৎকালীন সুপার পাওয়ার পারস্য সাম্রাজ্য ও রোমান সাম্রাজ্য তছনছ করে দিয়ে দিয়েছেল। সেই সাথে তিনি রোমান সম্রাট হেরাক্লিয়াসের বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ন হয়ে একাধারে ৯ টি তলোয়ার ভেঙ্গে ফেলেন। এমনকি তিনি মেসোপটেমিয়া ও সিরিয়া বিজয়ী করেছিলেন।
আরও পড়ুন: জেনে নিন চাকরির জন্য সিভি লেখার নিয়ম।
সামরিক নেতৃত্বের যতো গুলো গুণ থাকা প্রয়োজন সেসবগুলোই গুণ তাঁর মধ্যে বিদ্যমান ছিল। উপস্থিত বুদ্ধি, মানসিক দক্ষতা, তীক্ষ্ম মেধা সম্পূর্ণ, অসম সাহসিকতা, বাহাদুরি, অত্যাধিক ক্ষিপ্রতা, যুদ্ধক্ষেত্রে পরাক্রমশীলতা ও শত্রুর উপরে অকল্পনীয় আঘাত করার ব্যাপারে তিনি ছিলেন অদ্বিতীয়।
সুতরাং স্বাভাবিক ভাবেই বলায় যায় যে, তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সেনাপতি। তাঁর যুদ্ধের রণকৌশল এখনও বিভিন্ন দেশের সেনাবাহিনীতে শেখানো হয়। এই সেই খালিদ যার শরীরে এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে তলোয়ার বা বর্শার আঘাত নেই।
খালিদ বিন ওয়ালিদের যুদ্ধের রণকৌশলের জন্য মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁকে সাইফুল্লাহ উপাধী দিয়েছিলে। যার অর্থ আল্লাহর তরবারী। আর এই তরবাবী রুখার মতো আসমান থেকে জমীনে কে আছে। শুধু যুদ্ধ ক্ষেত্রেই বাহাদুরি বা ক্ষিপ্রতা নয় তাঁর জীবনে বিষ পান করে হজম করে ফেলার ঘটনাও আছে।
আজকের আর্টিকেলে আমরা জানবো খালিদ বিন ওয়ালিদ এর জীবনী সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য এবং সেই সাথে জানবো ইতিহাসে খালিদ বিন ওয়ালিদের অপারাজেয় সেনাপতি হওয়ার কারণ ও কেন তিনি ইতিহাসে বিখ্যাত এ সকল প্রশ্নের উত্তর আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে বিস্তারিত জানবেন।
খালিদ বিন ওয়ালিদ এর জীবনী
হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ এর পুরো নাম হল- আবু সোলাইমান খালিদ ইবনুল ওয়ালিদ ইবনে আল- মুগিরা আল- মাখজুমি। তিনি আনুমানিক ৫৯২ হিজরিতে আরব উপদ্বিপের মক্কায় জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পিতা ওয়ালিদ ইবনে মুগিরা ছিলেন মক্কার কুরাইশ বংশের বনু মাখজুম গোত্রের শেখ বা নেতা। এবং তাঁর মায়ের নাম মায়মুনা বিনতে আল-সুগরা। মক্কায় তাঁকে একক বলে ডাকা হতো ।
তাঁরা ছিলেন পাঁচ ভাই আর দুই বোন। খালিদ বিন ওয়ালিদের জন্মের পরে মক্কার কুরাইশদের ঐতিহ্য অনুসারে খালিদ বিন ওয়ালিদ কে আরবের মরুভূমির বেদুইন বা যাযাবরদের নিকট পাঠানো হয়। সেখানে তিনি তাঁর পালক মায়ের কাছে মরুভূমির শুষ্ক পরিবেশে বেড়ে উঠেন এবং ৫/৬ বছর বয়সে তাঁকে তাঁর বাবা মায়ের কাছে ফিরিয়ে আনা হয়।
বাল্যকাল থেকেই তিনি অশ্বারোহণ, বর্শা নিক্ষেপ, তীরধনুক ব্যবহার, তলোয়ার ব্যবহারে তিনি পারদর্শীতা অর্জন করেন। বর্শা তাঁর পছন্দের অস্ত্র গুলোর মধ্যে অন্যতম পছন্দের ছিল। এমন কি তিনি তরুন বয়সেই কুস্তিগির এবং যোদ্ধা হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। খালিদ বিন ওয়ালিদ এর জীবনী এগুলো অংশ বিশেষ।
খালিদ বিন ওয়ালিদের ইসলাম গ্রহণ
৬২৮ সালে হুদায় বিহার সন্ধির ফলে মুসলিম ও মক্কার কুরাইশদের মধ্যে দশ বছরের শান্তি চুক্তি হয়েছিল। এই সময় খালিদ ইসলাম গ্রহনের সিন্ধান্ত নেন এবং তাঁর বাল্যবন্ধু ইকরিমা ইবনে আবি জাহলের সাথে ইসলাম গ্রহণ বিষয়ে পরামর্শ করলে তাঁর বন্ধু এর চরম বিরোধিতা করেন। এমনকি এর ফলে আবু সুফিয়ানের রোষের মুখে পড়েন।
কিন্তু তাঁর বন্ধু ইকরিমা তাকে এই বিষয়ে শান্ত করেছিলেন এবং সেই সাথে ইকরিমা আবু সুফিয়ানকে হুমকি দেন যে তার ক্রোধের কারনে ইকরিমা নিজেও খালিদ ( রা.) সাথে ইসলাম গ্রহণ করতে পারেন। কেননা খালিদ বিন ওয়ালিদ তাঁর নিজ ইচ্ছানুযায়ী ধর্ম গ্রহণের স্বাধীনতা রাখেন।
এর ঘটনার পরে ৬২৯ হিজরিতে ইসলাম গ্রহণের জন্য খালিদ বিন ওয়ালিদ মক্কা থেকে মদিনার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন। যাত্রার পথিমধ্যে খালিদ বিন ওয়ালিদের সাথে সাক্ষাৎ হয় আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ধূর্ত কূটনীতিক আমর ইবনুল আসের সাথে। সাক্ষাৎ এর পরে জানতে পারেন আমর ইবনুল আস ও ইসলাম গ্রহণের জন্য মদিনায় যাচ্ছিলেন।
তাপরে তাঁরা দুইজনে একত্রে মদিনায় গিয়ে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) কাছে এসে ইসলাম গ্রহণ করেন।মূলত ইসলামের অগ্রযাত্রা এখান থেকেই আরও বেশি প্রসারিত হয়। আর এটিই খালিদ বিন ওয়ালিদের ইসলাম গ্রহণ এর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।
কেননা একই সাথে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন মক্কার সবচেয়ে বড় যোদ্ধা ও যোদ্ধপাগল খালিদ বিন ওয়ালিদ (রা.) ও আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ধূর্ত কূটনীতিক আমর ইবনুল আস। যা ইতিহাসের একটি নব সূচনার সৃষ্টি করে। খালিদ বিন ওয়ালিদ এর জীবনী এগুলো অবিচ্ছেদ্য অংশ।
খালিদ বিন ওয়ালিদ ইতিহাসে বিখ্যাত কেন
আজকের আর্টিকেলের এই অংশ আমরা আলোচনা করবো ইতিহাসের পাতায় ইসলামের অপরাজেয় সেনাপতি বা সমর নায়ক খলিদ বিন ওয়ালিদের বিখ্যাত হওয়ার কারণ সমূহ আলোচনা করতে গেলে অবশ্যই তাঁর গৌরবময় যুদ্ধে বিজয়ের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে হবে
মুতার যুদ্ধ: খালিদ বিন ওয়ালিদ (রা.) র ইসলাম গ্রহণের পরে প্রথম যুদ্ধ হল জর্ডানের মুতার প্রান্তরে। যা ইতিহাসে মুতার যুদ্ধ নামে পরিচিত। এ যুদ্ধটি সংগঠিত হয় রোমান সম্রাট হেরাক্লিয়াসের ১ লক্ষ বিশাল বাহিনীর সাথে অল্প সংখ্যক মাত্র ৩হাজার মুসলিম যুদ্ধাদের।
নবী করিম (সা.) এর জীবন দশায় রোমানদের বিরুদ্ধে একমাত্র যুদ্ধ ও খ্রীস্টানদের বিরুদ্ধে এটিই মুসলমানদের প্রথম যুদ্ধ।এ যুদ্ধে খালিদ বিন ওয়ালিদ ছিলেন সাধারণ সৈনিক এবং কমান্ডার ছিলেন যায়েদ বিন হারেছাহর (রা.)। যুদ্ধচলাকালীন অবস্থায় শহীদ হয়ে যান ১ম কমান্ডার যায়েদ।
এর পরে দায়িত্ব নেন দ্বিতীয় কমান্ডার হিসাবে জাফর ইবনে আবু তালিব। এরপরে তিনিও শহীদ হয়ে গেলে দায়িত্ব নেন তৃতীয় সেনাপতি হিসেবে আব্দুল্লাহ ইবেন রাওয়াহা। যুদ্ধের এক পর্যায়ে তিনি ও শহীদ হয়ে যান।যুদ্ধের ময়দানে তিন জন সেনাপতি হারিয়ে মুসলিম বাহিনী দিশেহারা ও কিংকর্তব্যবিমূড় হয়ে যান।
কেননা নবী করিম (সা.) এই তিনজনকেই সেনাপতি হিসেবে নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁদের প্রত্যকের শাহাদাৎ এর জন্য মুসলিম বাহিনী নেতৃত্ব সংকটে পড়ে। এই পরিস্থিতির ভয়াবহতা উপলব্ধি করে দ্রুত মুসলিম বাহিনীর পতাকা হাতে তুলে নেন সাবিদ বিন আরকাম (রা.)।
এক মুহূর্ত বিলম্ব না করে সেই পতাকা তুলে দেন যুদ্ধ পাগল বলিষ্ঠ দেহের অধিকারি খালিদ বিন ওয়ালিদের হাতে। আর বলেন- হে ওয়ালিদের পুত্র খালিদ আপনি আমাদের নেতৃত্বের দায়িত্ব গ্রহণ করুন। কিন্তু সাবিদ বিন আরকাম (রা.) যার হাতে মুসলমানদের পতাকা তুলে দিয়েছিলেন তিনি কেবল একজন নওমুসলিম।
তিনি কখনো এর পূর্বে মুসলমানদের পক্ষে যুদ্ধ করেন বরং ইসলাম গ্রহণের পূর্ব মুসলমান দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন। আর নওমুসলিম হওয়ার কারনে খালিদ বিন ওয়ালিদ সাবিদ বিন আরকাম (রা.) প্রস্তাব প্রত্যাখান করেন এবং বলেন আমি কেবল সবে মাত্র আল্লাহ ও নবীর উপরে ইমান এনেছি।
আমি কি করে আল্লাহর রাসূলের এতোগুলো বিস্তস্থ সাহাবীদের উপরে নেতৃত্ব দিতে পারি। এ আমার কাছে এক স্পর্ধার বিষয়।সাবিদ বিন আরকাম (রা.) হে ওয়ালিদের পুত্র এ যুদ্ধের ময়দানে আপনার চেয়ে আর কোনো যোগ্য যুদ্ধা নেই। অযথা সময় নষ্ট না করে পতাকা হাতে তুলে নিন আর বিপর্যস্ত মুসলিম বাহিনীর উপর নিজের কতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করুন।
এরপরে খালিদ বিন ওয়ালিদ (রা.) নেতৃত্ব গ্রহণ করেন এবং পরাক্রমশালী হয়ে পুনরায় যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েন। মুহূর্তেই যুদ্ধের পরিস্থিতি পরিবর্তন হয়ে যায়। তিনি মাত্র তিন হাজার মুসলিম বাহিনী নিয়ে ঝাপিয়ে পড়েন ১ লক্ষ রোমান বাহিনীর বিরুদ্ধে। অপ্রতিরুদ্ধ আক্রমনে ঝাপিয়ে পড়ে মুসলিম বাহিনী বিশাল শত্রু বাহিনীর উপরে।
অপ্রতিরোধ্য গতিতে তাঁরা যুদ্ধের ময়দানে এগিয়ে যায় শত্রু বাহিনীর উপরে। পরাজয়ের দারপ্রান্তে থাকা মুসলিম বাহিনীর এই অপরতিরোধ্য আক্রমনের ফলে রোমান বাহিনীরা দিশেহারা হয়ে পড়ে। শত্রু পক্ষরা বুঝতেই পারেনা যে, হঠাৎ করে কিসের শক্তিতে মুসলিম বাহিনী এতোটা আক্রমনাক্ত হয়ে উঠেছে।
তাদের এই চিন্তা ভাবনা শেষ হওয়ার পূর্বেই যুদ্ধের পরিস্থিতি পুরোপুরি বদলে দেন নতুন এই মুসলিম সেনাপতি খালিদ বিন ওয়ালিদ।যুদ্ধের ময়দানে খালিদ বিন ওয়ালিদের অপ্রতিরোধ্য ক্ষিপ্রতা এতোটাই বেশি ছিল যে তাঁর হাতে থাকা তলোয়ার ভেঙ্গে যায় শত্রু পক্ষকে আঘত করতে করতে।
তাপরে তিনি আরও একটি তলোয়ার হাতে তুলে নেন এবং সেই একই ক্ষিপ্রতায় শত্রুর উপরে আঘাত করেন এবং এক সময় দ্বিতীয় তলোয়ার ও ভেঙ্গে ফেলেন শত্রু বাহিনীর উপরে। এভাবে একে একে নয়টি তলোয়ার ভেঙ্গে ফেলেন এ যুদ্ধে।
নয়টি তলোয়ার ভাঙ্গার পরে তিনি যখন হাতে দশমতম তলোয়ার তুলে নিয়েছেন ততোক্ষণে শত্রু বাহিনীর হুস ফিরেছে এবং তারা উপলব্ধি করে এই নতুন কমান্ডারকে মোকাবেলা করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। কেননা কোনো তলোয়ার যেমন খালিদ বিন ওয়ালিদের হাতে থাকার সামর্থ থাকেনা ঠিক তেমনি কোনো শত্রু পক্ষও তাঁর সামনে অক্ষত থাকার সামর্থ রাখেনা।
এসব দেখে নিশ্চিত মৃত্যু এড়াতে পিছু হাটে রোমান বাহিনীরা। যার ফলে যুদ্ধের ফলাফল অমিমাংসি রেখেই তিনি তাঁর বাহিনী নিয়ে মদিনায় প্রত্যাবর্তন করেন। আর এভাবেই এক অমিমাংসিত যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে আত্মপ্রকাশ ঘটে এক অপরাজেয় সেনাপতির এবং ইসলামের ছাঁয়া তলে আবির্ভুত হন এক অপ্রতিরোধ্য যোদ্ধা।
মদিনায় ফিরে আসার পরে তাঁর অপ্রতিরোধ্য যুদ্ধের কথা শুনে নবী করিম (সা.) তাঁকে সাইফুল্লাহ উপাধিতে ভূষিত করেন। যার অর্থ আল্লাহর তরবারী বা তলোয়ার। আল্লাহর এ তলোয়ার যতবারই উন্মূক্ত হয়েছে ততবারই প্রতিপক্ষের পরাজয় মৃত্যু ও পলায়ন ছাড়া আর অন্য কিছুই ঘটেনি।
এই তরবারীর ঝংকানিতে ধ্বংস হয়ে যায় বছরের পর বছর ধরে পৃথিবী শাসন করে আসা পারস্য সাম্রাজ্য। এই তরবারীর প্রচন্ড ক্ষিপ্রতায় দিশেহারা হয়ে রাজত্ব ছেড়ে ইউরোপে পালিয়ে যায় রোমান সম্রাট হেরাক্লিয়াস। পারস্যের দূর্ভেদ্য লোহার প্রাচীর আর রোমের লৌহ বর্ম সব কিছুই খান খান হয়ে গেছে এই তরবারীর কাছে।
তিনি প্রতিটি যুদ্ধে অপ্রতিরোধ্য গতিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন শত্রুদের ধ্বংস করতে এবং নিজের শাহাদাৎ বরনের তীব্র ইচ্ছা নিয়ে। কিন্তু পৃথিবীতে এমন কোনো যুদ্ধার জন্ম হইনি যে এই আল্লাহর তরবারীকে পরাস্থ করতে পারে। তিনি পৃথিবীর বুকে একমাত্র অপ্রতিরোধ্য যোদ্ধা হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ (রা.)।
ওয়ালজার যুদ্ধ: ওয়ালজার যুদ্ধে পারস্যের এক বিশাল দেহের সেনাপতি খালিদ (রা) সামনে এসেছিল তাঁকে পরাজিত করার জন্য। সেইসাথে পারশিয়ানরা অপেক্ষা করছিল খালিদের শেষ দেখার জন্য। কেননা পার্শিয়ানরা জানতো এই পুরুষ একাই ১০০০ পুরুষের সমান শক্তি ধারন করে। তাই পার্শিয়ানরা তার নাম দিয়েছিল হাজার মর্দ।
লড়াই শুরু হওয়ার আগে পার্শিয়ানরা উল্লাস করতে থাকে কিন্তু খালিদ (রা.) তাকে কিছুক্ষণের মধ্যে হত্যা করে এবং সাথে সাথে পার্শিয়ানদের উল্লাস থেমে যায়। সেদিন সেই হাজার মর্দর বুকের উপরে বসে খালিদ দুপুরের খাবার খেয়েছিলেন এবং পার্শিয়ানদের দিকে চেয়ে মুচকি হেসেছিলেন।
খালিদ বিন ওয়ালিদ (রা.) মুতার যুদ্ধ, ওয়ালজার যুদ্ধ সহ প্রায় ১০০ এর বেশি যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিলেন এবং প্রতিটি যুদ্ধে তিনি বিজয়ী হয়েছেন। তিনি ভন্ডনবী তুলায়হা থেকে মোসায়লামা, সেনাপতি হরমুজ থেকে রোমান সর্বাধিনায়ক মাহান সহ তৎকালীন সকল ভন্ড রাজা মহারাজার, সেনাপতি বা যোদ্ধার কাছে খালিদ বিন ওয়ালিদ ছিল এক আতংকের নাম।
তিনি জয় করেছিলে বুজাখা থেকে ইয়ামামা, কুয়েতের কাজিমা থেকে ইরাকের হীরা, আনবার থেকে শুরু করে পারস্যের শেষ দূর্গ ফিরোজ, রোমান সম্রাজ্য, আজনাদায়েন থেকে জর্ডানের ফাহল, সিরিয়ার দামেস্ক থেকে শুরু করে ইমেসা, ইয়ারমুক, আলেপ্পোসহ একের পরে এক শহর, রাজ্য- সম্রাজ্য । তাহলে বুঝতেই পারছেন খালিদ বিন ওয়ালিদ ইতিহাসে বিখ্যাত কেন ।
এতো সব বীরত্ব গাঁথা ইতিহাসের মহানায়ক হওয়ার পরেও তাঁর মৃত্যুর পূর্বে অসুস্থ অবস্থায় তাঁর স্ত্রীর কাছে চরম আফফোস করে বলেছিলে যে-
"আমি শাহাদাতের ইচ্ছা নিয়ে এত বেশি যুদ্ধে লড়াই করেছি যে আমার শরীরে এমন কোনো ক্ষতচিহ্ন নেই যা বর্শা বা তলোয়ারের আঘাতের কারণে হয়নি। এর পরেও আমি এখানে, বিছানায় পড়ে একটি বৃদ্ধ উটের মতো মারা যাচ্ছি। কাপুরুষদের চোখ যাতে কখনো শান্তি না পায়।" খালিদ বিন ওয়ালিদ এর জীবনী সংক্ষিপ্ত বিবারণ এগুলোই।
খালিদ বিন ওয়ালিদ কোন যুদ্ধে সাইফুল্লাহ উপাধি লাভ করেছিলেন
মদিনায় ফিরে আসার পরে তাঁর অপ্রতিরোধ্য যুদ্ধের কথা শুনে এবং যুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য নবী করিম (সা.) তাঁকে সাইফুল্লাহ উপাধিতে ভূষিত করেন। যার অর্থ আল্লাহর তরবারী বা তলোয়ার। আল্লাহর এ তলোয়ার যতবারই উন্মূক্ত হয়েছে ততবারই প্রতিপক্ষের পরাজয় মৃত্যু ও পলায়ন ছাড়া আর অন্য কিছুই ঘটেনি।
তাহলে প্রিয় পাঠক এতোক্ষণ জেনে গেছেন যে খালিদ বিন ওয়ালিদ কোন যুদ্ধে সাইফুল্লাহ উপাধি লাভ করেছিলেন এবং সেই যুদ্ধের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।
হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ রাঃ কোন যুদ্ধে নয়টি তরবারি ভেঙে ছিলেন
মুতার যুদ্ধে হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ এতোটাই অপ্রতিরোধ্য ক্ষিপ্রতায় শত্রু পক্ষের উপরে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিলেন যে তিনি সেই মুতার যুদ্ধে শত্রু পক্ষ রোমান বাহিনীর বিরুদ্ধে একে একে নয়টি তলোয়ার ভেঙ্গেছিলেন। তাহলে বুঝতেই পারছেন হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ রাঃ কোন যুদ্ধে নয়টি তরবারি ভেঙে ছিলেন।
খালিদ বিন ওয়ালিদ নাম রাখা যাবে কি
আপনি যদি আপনার আপনার সন্তানের নাম খালিদ বিন ওয়ালিদ রাখতে চান তাহলে সেক্ষেত্রে আপনার নাম ওয়ালিদ হতে হবে। তাছাড়া বড্ড বেমানান লাগবে। খালিদ নাম রাখতে চাইলে খালিদ বিন আপনার নাম যোগ করে রাখতে পারেন। অথবা খালিদ হাসান, খালিদ মাহামুদ ইত্যাদি নাম রাখতে পারেন।
খালিদ বিন ওয়ালিদ নামের অর্থ
খালিদ বিন ওয়ালিদ নামের অর্থ হল- ওয়ালিদের পুত্র খালিদ।
লেখকের মন্তব্য
প্রিয় পাঠক, খালিদ বিন ওয়ালিদ এর জীবনী সম্পর্কে ইতিমধ্যে অনেক তথ্য জেনেছেন। সেই সাথে আরও জেনেছেন এই মহাবীর কেন ইতিহাসের পাতায় চিরো স্মরণী হয়ে আছেন। কেননা খালিদ বিন ওয়ালিদ ছিলেন ইতিহাসে এক অপ্রতিরোধ্য সামরিক মহানায়ক। যার সামনে সকল অপশক্তি ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যেতো।
আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ রূপে ধৈর্য সহকারে পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আজকের আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে যদি আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন, তাহলে অনুগ্রহ করে পরিচিতদের মাঝে শেয়ার করে দিবেন। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের তথ্য পেতে আমাদের ওয়েব সাইট www.kanon24.com নিয়মিত ভিজিট করুন। ধন্যবাদ
কানন২৪ এর নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন।প্রতিটি মন্তব্যের জবাব দেওয়া হয়;
comment url