মধু দিয়ে ত্বক ফর্সা করার উপায়
মধু দিয়ে ত্বক ফর্সা করার উপায় সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়াও মুখে মধু ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। সুতরাং আপনি যদি একজন রূপচর্চা ও স্বাস্থ্য সচেতন প্রিয় মানুষ হয়ে থাকেন তাহলে আজকের আর্টিকেলটি শুধুমাত্র আপনার জন্য।
সেই সাথে আজকের আর্টিকেলে রূপচর্চায় মধুর ব্যবহার সম্পর্কে আলোচনা করার পূর্বে মধু সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য জেনে নেওয়া জরুরী। তাহলে চলুন আজকের আর্টিকেল এর মাধ্যমে বিস্তারিত সকল তথ্য জেনে নিই।
ভূমিকা
মধু মানুষের জন্য আল্লাহ তা'আলার অশেষ এক নিয়ামত। স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য এবং সকল প্রকার রোগ দূরে রাখার জন্য মধুর গুরুত্ব অপরিসীম। তাই মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এই মধুকে খাইরুদ্দাওয়া বা মহাওষুধ বলেছেন এছাড়াও আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রে সকল রোগের মহা ঔষধ বলা হয় মধুকে।
মধু পান করার মাধ্যমে তো উপকার আছে সেই সাথে রূপচর্চায় ও মধুর ব্যবহার হয়ে আসছে সেই বা প্রাচীন যুগ থেকে। মধুতে নানা রকম পুষ্টিগুণে ভরপুর। যার ফলে এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে ত্বক মসৃণ সুন্দর ও সতেজ করতে সাহায্য করে সেই সাথে ত্বকের যাবতীয় কালচে ভাব বা কালো দাগ দূর করে দেয়।
এছাড়াও ব্রণের সমস্যা সহ যাবতীয় ত্বকের সমস্যা চিরতরে দূর করে দিতে মধু বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। সুতরাং দ্রুত সময়ের মধ্যে আপনি যদি আপনার ত্বক সুন্দর করতে চান তাহলে অবশ্যই মধু ব্যবহার করতে পারেন। তাহলে প্রিয় পাঠক, চলুন জেনে নিই মধু দিয়ে ত্বক ফর্সা করার উপায় গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত সকল তথ্য সমূহ।
মধু দিয়ে ত্বক ফর্সা করার উপায়
রূপচর্চা মধুর ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত সকল তথ্য আলোচনা করা হল-
মধু ও পাকা পেঁপে: রূপচর্চায় মধুর সাথে পাকা পেঁপে খুবই উপকারী একটি প্যাক। এই মিশ্রণটি ব্যবহারের ফলে আপনার ত্বকের দ্রুতই ফর্সা, উজ্জ্বল, মসৃণ ও সতেজ হবে। সেই সাথে ত্বকের মৃত কোষ গুলো দূর করে দেবে। এমনকি স্নানবার্ণে ক্ষতিকর কোষগুলো দূর হয়ে যাবে। এছাড়াও এই প্যাকটি বয়সের ছাপ দূর করতেও সাহায্য করে থাকে।
এই প্যাকটি তৈরি করার জন্য প্রথমে আপনাকে দুই টুকরো পেঁপে নিয়ে ভালোভাবে চটকে নিতে হবে এবং এর সাথে দুই চা চামচ পরিমাণ মধু ভালোভাবে মিশ্রণ করে ঘন করে প্যাক তৈরি করতে হবে। তারপর এই প্যাকটি ভালোভাবে আপনার ত্বকে লাগিয়ে হালকা করে ম্যাসাজ করতে হবে। তারপরে ১০ থেকে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন।
তারপর ভালো করে ধুয়ে ফেলতে হবে। এই ব্যক্তি নিয়মিত কিছুদিন ব্যবহার করলে আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন এই প্যাকের কার্যকারিতা সম্পর্কে। মধু দিয়ে ত্বক ফর্সা করার উপায় গুলোর মধ্যে এটি একটি অন্যতম উপায়।
মধু ও মুলতানি মাটির প্যাক: রূপচর্চায় মধু ও মুলতানি মাটির ব্যবহার হয়ে আসছে বহুদিন ধরে। মুলতআনি মাটি হল একধরনের কাদামাটি। যা প্রসাধনি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এই প্যাকটি নিয়মিত ব্যবহার করলে আপনার ত্বকের গভীরে জমে থাকে সকল প্রকার ময়লা পরিষ্কার করবে এবং সেই সাথে ব্রণ দূর করতেও যথেষ্ঠ ভূমিকা পালন করে থাকে।
এই প্যাকটি তৈরির জন্য প্রথমে আপনাকে দুই চামচ পরিমান মুলতানি মাটি ও ১ চামচের একটু বেশি মধু নিতে হবে। তারপর মুলতানি মাটি ও মধু ভালোভাবে মিশ্রণ করে প্যাক তৈরি করে নিতে হবে। তারপরে এটি ত্বকে ভালোভাবে লাগিয়ে ম্যাসাজ করতে হবে এবং ১৫-২০ মিনিটের মতো অপেক্ষা করতে হবে। তারপরে ধুয়ে ফেলতে হবে।
সুতরাং আপনি যদি আপনার ত্বক দ্রুত ফর্সা করতে চান এবং সেই সাথে ত্বক উজ্জ্বল, মসৃণ ও সতেজ রাখতে চান তাহলে এই মধু ও মুলতানি মাটির প্যাকটি ব্যবহার করতে পারেন। তাহলে দ্রুত ফলাফল পাবেন।
মধু ও আ্যলোভেরা: রূপচর্চায় মধু ও আ্যলোভেরা সেই প্রাচীনকাল থেকে ব্যবহার হয়ে আসছে। এছাড়াও মধু ও আ্যলোভেরা গুণাগুণ সম্পর্কে আমরা প্রায় সকলেই কমবেশি জানি। মধু ও আ্যলোভেরা আমাদের ত্বককে দ্রুত ফর্সা, উজ্জ্বল, মসৃণ ও সতেজ করতে সহায়তা করে থাকে এবং সেই সাথে ত্বকের যাবতীয় সমস্যা দূর করতেও যথেষ্ঠ ভূমিকা পালন করে থাকে।
এই মিশ্রণটি ব্যবহারের জন্য প্রথমে আপনাকে পরিমান মতো মধু ও আ্যলোভেরা জেলে নিতে হবে ( অবশ্যই গাছের আ্যলোভেরা জেল নিবেন) চাইলে সাথে একটু টক দই দিয়ে ভালো ভাবে মিশ্রণ করে নিন। এরপরে ত্বকে ভালো মতো লাগিয়ে কিছুক্ষণ ম্যাসাজ করতে হবে এবং ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষা করার পরে ধুইয়ে ফেলতে হবে।
সুতরাং আপনি যদি আপনার ত্বক দ্রুত ফর্সা, উজ্জ্বল, মসৃণ ও সতেজ করতে চান, তাহলে নিয়মিত মধু ও আ্যলোভেরা জেলের এই প্যাক ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে দ্রুত ফলাফল পাবেন। মধু দিয়ে ত্বক ফর্সা করার উপায় গুলোর মধ্যে এটি অন্যতম একটি উপায়।
মধু ও বেসন: ত্বক দ্রুত ফর্সা করার জন্য মধু ও বেসন খুবই কার্যকরী একটি ঘরোয়া উপাদান। এটি ব্যবহারের ফলে ত্বক ফর্সা, উজ্জ্বল, সতেজ করার পাশাপাশি ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর করতে সহায়তা করে থাকে।
এই প্যাকটি তৈরি করার জন্য প্রথমে আপনাকে দুই চা চামচ বেসন ও এক চা চামচ পরিমান মধু নিয়ে ভালো ভাবে মিশ্রণ করতে হবে। তারপরে এটি ত্বকে ভালোভাবে লাগাতে হবে এবং ১৫-২০ মিনিটের মতো অপেক্ষা করতে হবে। তারপরে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে। নিয়মিত এই প্যাকটি ব্যবহার করলে অল্প দিনের মধ্যেই ফলাফল পাবেন।
মধু ও টক দই: ত্বক ভালো রাখতে মধু ও টক দই বিশেষ গুরুত্ব পালন করে থাকে। এছাড়াও রূপচর্চাউ মধু ও টক দইয়ের ব্যবহার হয়ে আসছে বহুদিন ধরেই। এই প্যাকটি ত্বক ফর্সা, উজ্জ্বল, সতেজ ও মসৃণ করার পাশাপাশি ত্বককের তৈলাক্ত ভাব দূর করতে সহায়তা করে থাকে।
এই প্যাকটি তৈরি করার জন্য প্রথমে আপনাকে এক চা চামচ টক দইয়ের সাথে এক চা চামচ পরিমান মধু ভালোভাবে মিশ্রণ করতে হবে। তারপরে এটি ত্বলে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। তারপরে কুসুম গরম পানি দিয়ে ভালো মতো ধুয়ে নিন। নিয়মিত এই মিশ্রণঅটি ব্যবহার করলে অতি দ্রুত ত্বক ফর্সা হয়ে যাবে।
মধু ও কলার প্যাক: ত্বক ভালো রাখার জন্য মধু ও কলার প্যাক যথেষ্ঠ সহায়তা করে থাকে। এর জন্য প্রথমে আপনাকে একটি কলা ভালো মতো চটকে নিতে হবে। তারপরে এক চা চামচ পরিমান মধু দিয়ে ভালো মতো মিশ্রণ করে প্যাক তৈরি করে নিতে হবে। তারপরে ত্বকে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিটের মতো অপেক্ষা করতে হবে এবং কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
সুতরাং আপনি যদি আপনার ত্বকের কালচে দাগ দূর করে ত্বকে আরও বেশি ফর্সা, উজ্জ্বল, মসৃণ ও সতেজ করতে চান, তাহলে অবশ্যই মধু ও কলার মিশ্রণ প্যাকটি ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে দ্রুত ফলাফল পাবেন। মধু দিয়ে ত্বক ফর্সা করার উপায় গুলোর মধ্যে এটি অন্যতম একটি উপায়।
মধু ও মিল্ক ক্রিম: রূপচর্চা অনেকে মধু ও মিল্ক ক্রিমের প্যাক ব্যবহার করে থাকেন। কেননা এটি ব্যবহারের ফলে ত্বক ফর্সা, উজ্জ্বল ও সতেজ করার পাশাপাশি ত্বকের বালিরেখা দূর করতে সহায়তা করে থাকে। এই প্যাকঅটি তৈরি করার জন্য প্রথমে আপনাকে এক চা চামচ পরিমান মিল্ক ক্রিম ও এক চা চামচ পরিমান মধু নিয়ে ভালোভাবে মিশ্রণ করতে হবে।
তারপরে ত্বকে লাগিয়ে কিছুক্ষন ম্যাসাজ করতে হবে এবং ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। তারপরে হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে ত্বক ভালো মতো ধুয়ে ফেলতে হবে। তাহলে দ্রুত আপনার ত্বক ফর্সা, উজ্জ্বল, মসৃণ ও সতেজ হবে এবং সেই সাথে ত্বকের বালি রেখাও দূর হবে।
মধু, গোলাপজল ও হলুদ: রূপচর্চা মধু, গোলাপজল ও হলুদের গুরুত্ব অপরিসীম। প্রাচীনকাল থেকেই রূপচর্চায় এগুলো ব্যবহার হয়ে আসছে। এই প্যাকটি নিয়মিত ব্যবহার করলে খুবই দ্রুত ত্বক ফর্সা, উজ্জ্বল, মসৃণ ও সতেজ হবে।
এই প্যাকটি তৈরি করার জন্য প্রথমে আপনাকে এক চা চামচ মধু, কয়েক ফোঁটা গোলাপজল ও সামান্য হলুদের গুড়া এক সাথে ভালো বানে মিশ্রণ করে নিতে হবে। তারপরে ত্বকে ভালোমতো লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। তারপর ভালোমতো ধুয়ে ফেলতে হবে।
সুতরাং আপনি যদি আপনার ত্বকে কালচে ভাব দূর করতে চান এবং ত্বককে ফর্সা, উজ্জ্বল, মসৃণ ও ফর্সা করতে চান তাহলে নিয়মিত এই প্যাকটি ব্যবহার করতে পারেন। তাহলে খুবই দ্রুত ফলাফল পাবেন।
মুখে মধু ব্যবহারের নিয়ম
মুখে মধু ব্যবহারের জন্য বেশ কিছু নিয়ম মানা জরুরী। যেমন-
- মুখে মধু ব্যবহারের জন্য প্রথমে আপনার মুখকে ভালো ভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
- মুখে মধু ব্যবহারের জন্য সবচেয়ে ভালো সময় হল গোসলের পূর্বে। কিন্তু আপনি চাইলে যেকোনো সময় মধু মুখে ব্যবহার করতে পারেন।
- তারপরে মুখে মধু লাগিয়ে সর্বনিম্ন ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে ভালো ফলাফলের জন্য।
- মুখে মধু ব্যবহার করার পরে অবশ্যই হালকা বা কুসুম গরম পানি দিয়ে ভালোভাবে মুখ ধুয়ে নিতে হবে।
- এছাড়াও উপরে বর্ণিত নিয়ম অনুসরন করে মধু ব্যবহার করতে হবে।
রাতে মুখে মধু মাখার উপকারিতা
আপনি রাতে অথবা দিনে যখনই মুখে মধু মাখেন না কেন এর উপকারিতা প্রায় একই রকম। সেই সাথে যদি আপনি আজকের আর্টকেলে বর্ণিত উপরের অংশ গুলো ভালোমতো পরে থাকেন তাহলে ইতিমধ্যে জেনে গেছেন যে, রাতে মুখে মধু মাখার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত সকল তথ্য।
মধু ও লেবুর রস মুখে দিলে কি হয়
মধু ও লেবুর ত্বকে নিয়মিত ব্যবহার করলে ত্বক ফর্সা, উজ্জ্বল, মসৃণ ও সতেজ হয়ে যায়। সেই সাথে ত্বকের অনেক সমস্যাও দূর হয়ে যায়। এ জন্য রূপচর্চায় মধু ও লেবুর রসের ব্যবহার হয়ে আসছে দীর্ঘ দিন থেকে। এই প্যাক ব্যবহারের জন্য প্রথমে আপনাকে এক চা চামচ মধু ও এক চা চামচ লেবুর রস ভালো ভাবে মিশ্রণ করে নিতে হবে।
তারপরে মুখে লাগিয়ে ভালোমতো ম্যাসাজ করে নিতে হবে এবং ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে এবং কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। সুতরাং এই প্যাকটি নিয়মিত ব্যবহার করলে অতি দ্রুত ত্বক ফর্সা, উজ্জ্বল, মসৃণ ও সতেজ যাবে। তাহলে বুঝতেই পরছেন মধু ও লেবুর রস মুখে দিলে কি হয় ।
মধু দিয়ে ফেসিয়াল
মধু দুয়ে ফেসিয়ালের জন্য আপনাকে প্রথমে এক চা চামচ মধু , এক চা চামচ লেবুর রস এবং এক চা চামচ পরিমান চিনি দিয়ে ভালো মতো মিশ্রণ করে নিতে হবে। তারপরে মুখে/ ত্বকে লাগিয়ে ভালো মতো ম্যাসাজ করতে হবে যতক্ষণ না চিনি ত্বকের সাথে মিশে যায়।
তারপরে কুসুম গরম পানি দিয়ে ভালো মতো ধুয়ে ফেলতে হবে। নিয়মিত এই স্ক্রাবটি ব্যবহার করলে অতি দ্রুত ত্বক আরও বেশি ফর্সা, উজ্জ্বল, মসৃণ ও সতেজ হয়ে যাবে। এটিই মধু দিয়ে ফেসিয়াল করার নিয়ম।
লেখকের মন্তব্য
প্রিয় পাঠক, মধু দিয়ে ত্বক ফর্সা করার উপায় সম্পর্কে সকল তথ্য ইতি মধ্যে জেনেছেন। সুতরাং আপনি যদি আপনার ত্বক আরও বেশি ফর্সা, উজ্জ্বল, মসৃণ ও সতেজ করতে চান তাহলে নিয়মিত উপরে বর্ণিত টিপস গুলো অনুসরন করতে পারেন।
আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ রূপে ধৈর্য সহকারে পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আজকের আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে যদি আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন, তাহলে অনুগ্রহ করে পরিচিতদের মাঝে শেয়ার করে দিবেন। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের তথ্য পেতে আমাদের ওয়েব সাইট www.kanon24.com নিয়মিত ভিজিট করুন। ধন্যবাদ
কানন২৪ এর নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন।প্রতিটি মন্তব্যের জবাব দেওয়া হয়;
comment url