পুরুষদের জন্য অ্যালোভেরার উপকারিতা ও রূপচর্চায় অ্যালোভেরার ব্যবহার
পুরুষদের জন্য অ্যালোভেরার উপকারিতা সম্পর্কে আপনি জানতে যদি আগ্রহী হয়ে থাকেন, তাহলে আজকের আর্টিকেলটি শুধু মাত্র আপনার জন্য। এছাড়াও ত্বকে অ্যালোভেরার উপকারিতা এ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য আজকের আর্টিকেলে আলোচনা করা হয়েছে।
সেই সাথে রূপচর্চায় অ্যালোভেরা ব্যবহার ও খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত সকল তথ্য আজকের আর্টিকেলে আলোচনা করা হয়েছে। তাহলে চলুন সময় ক্ষেপন না করে চলুন জেনে নিই অ্যালোভেরা সম্পর্কিত সকল তথ্য।
ভূমিকা
অ্যালোভেরার মহান আল্লাহর অশেষ একটি নিয়ামত। অ্যালোভেরা আমাদের প্রায় সবারই বাড়ির আশেপাশে থাকে অথবা অনেকের ছাঁদ, বারান্দা কিংবা বাড়ির উঠানে থাকে। কিন্তু আমরা অনেকেই জানিনা অ্যালোভেরার গুণাগুণ সম্পর্কে। আজকের আর্টিকেলে জেনে নিবো নারী ও পুরুষদের জন্য অ্যালোভেরার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।
মানুষ জন্মগত ভাবেই সুস্থ ও সুন্দর থাকতে চাই। এজন্যই প্রায় সকল প্রকারেরই চেষ্টা করে। অনেকে নারী বা পুরুষ তাই বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল পন্য ব্যবহার করে থাকেন, তবে অনেকেই প্রাকৃতিক ভেষজ উপাদান ব্যবহার করে নিজের ত্বকের যত্নের সাথে শরীরকে ও সুস্থ ও ফিট রাখার স্বাচ্ছন্দবোধ করেন।
আর প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে বহুল ব্যবহৃত উপাদানটি হচ্ছে ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরার। তবে অনেকেই আমরা বাজার থেকে কেমিক্যাল যুক্ত অ্যালোভেরা জেল কিনে থাকি। কিন্তু এটি আমাদের জন্য ক্ষতিকর ও হতে পারে। তাই সবসময় চেষ্টা করবেন অর্গানিক বা অ্যালোভেরার গাছ থেকে অ্যালোভেরা সংগ্রহ করে ব্যবহার করা জন্য।
অ্যালোভেরার উপকারিতা
- ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
- বদ হজম দূর করে থাকে।
- দ্রুত ওজন কমাতে সাহায্য করে।
- কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
- টক্সিন দূর করে।
- রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ রাখে।
- ত্বকের আদ্রতা বজায় রাখে।
- আলার্জি সমস্যা দূর করে।
- ক্ষত সারাতে সাহায্য করে।
- ত্বকের কালো দাগ দূর করে।
- ত্বকের মৃত কোষ দূর করে।
- ত্বক মসৃন করে।
- ব্রণের সমস্যা দূর করে।
- শীতে ত্বকের ফেটে যাওয়া রোধ করে।
- মেছতার দাগ দূর করে।
- মসৃণ ঠোঁট পেতে সাহায্য করে।
- চুল পড়া বন্ধ হই।
- খুশকি দূর করে।
- চুল সিল্কি করে।
- চুল ফাটা রোধ করে।
- এগুলো ছাড়াও অ্যালোভেরার উপকারিতা রয়েছে অনেক।
পুরুষদের জন্য অ্যালোভেরার উপকারিতা
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে: ডায়বেটিক নিয়ন্ত্রণে এলোভেরা বা ঘৃতকুমারীর গুরুত্ব অপরিসীম। কেননা নিয়মিত প্রতিদিন এক গ্লাস পরিমান অ্যালোভেরার জুস পান করলে ইনসুলিন সেনসেটিভিটি বাড়ে, ফলে রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে থাকে। যার ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। তাই যুগ যুগ ধরে প্রাকৃতিক চিকিৎসায় ব্যবহার হয়ে আসছে অ্যালোভেরা।
সুতরাং আপনি যদি ডায়াবেটিস এর মতো জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তাহলে নিয়মিত প্রতিদিন এক গ্লাস করে অ্যালোভেরার জুস পান করতে পারেন। এতে করে দ্রুতই আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। পুরুষদের জন্য অ্যালোভেরার উপকারিতা গুলোর মধ্যে এটি অন্যতম একটি উপকারিতা।
দ্রুত ওজন কমাতে: দ্রুত ওজন কমাতে অ্যালোভেরা জুড়ি নেই।কেননা এতে রয়েছে প্রচুর পরিমান ভিটামিন, মিনারেল, অ্যামাইনো অ্যাসিড, এনজাইম আর স্টেরলসহ বিভিন্ন উপাদান। যা আমাদের অতিরিক্ত ওজন দ্রুত হ্রাস করতে যথেষ্ঠ সহায়তা করে থাকে।
সুতরাং আপনি যদি অতিরিক্ত ওজনে ভুগে থাকেন, তাহলে নিয়মিত প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক গ্লাস পরিমান অ্যালোভেরার জুস পান করতে পারেন। এতে করে আপনার ওজন খুবই দ্রুত বেগে হ্রাস পাবে। অ্যালোভেরার জুস অনেক তিতা তাই খাওয়ার সময় মধু বা লেবু ব্যবহার করে পান করতে পারেন।
হজম শক্তি বৃদ্ধি করে: আপনি যদি প্রতি নিয়ত বদ হজমে জটিল সমস্যায় ভুগে থাকেন তাহলে আপনি চাইলে নিয়োমিত এলোভেরার জুস পান করতে পারেন। এতে করে দ্রুই আপনার বদ হজমের সমস্যা দূর করে হজম শক্তি বৃদ্ধি করবে। সুতরাং বদ হজমের সমস্যা থাকলে নিয়মিত এক গ্লাস করে অ্যালোভেরার জুস পান করতে পারেন।
রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ রাখে: আপনার যদি রক্তের শর্করা মান নিয়ন্ত্রণ না থাকে তাহলে বিভিন্ন ধরনের রোগ হওয়ার সম্ভবনা থাকে। তাই রক্তে শর্করার মান নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইলে নিয়মিত প্রতিদিন এক গ্লাস পরিমান অ্যালোভেরার জুস পান করতে পারেন। কেননা অ্যালোভেরার জুস নিয়মিত পান করলে ইনসুলিন সেনসেটিভিটি বাড়ে।
আরও পড়ুন: জেনে নিন
যার ফলে রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। সুতরাং আপনি যদি আপনরা রক্তের শর্করার মান নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান, তাহলে নিয়মিত প্রতিদিন এক গ্লাস পরিমাণ অ্যালোভেরার জুস পান করতে পারেন। এতে করে দ্রুতই রক্তের শর্করার মান নিয়ন্ত্রণে হবে। পুরুষদের জন্য অ্যালোভেরার উপকারিতা গুলোর মধ্যে এটি অন্যতম একটি।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে: আপনি যদি কোষ্ঠকাঠিন্যর মতো জটিল সমস্যায় প্রতিনিয়ত ভুগে থাকেন, তাহলে অবশ্যই নিয়োমিত প্রতিদিন এই অ্যালোভেরার জুস পান করতে পারেন। এতে করে দ্রুতই আপনার কোষ্ঠকাঠিন্যর মতো জটিল সমস্যা সহজেই দূর হয়ে যাবে। এটি পুরুষদের জন্য অ্যালোভেরার উপকারিতা গুলোর মধ্যে একটি।
ত্বকে অ্যালোভেরার উপকারিতা বা রূপচর্চায় অ্যালোভেরার ব্যবহার
ত্বকের আদ্রতা বজায় রাখে: আপনি যদি আপনার ত্বকের আদ্রতা বজায় রাখতে চান তাহলে অবশ্যই নিয়োমিত অ্যালোভেরার জেল ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন। কেননা অ্যালোভেরাতে থাকা পুষ্টি উপাদান ত্বকের আদ্রতা বজায় রাখতে যথেষ্ঠ সহায়তা করে থাকে। এটিই ত্বকে অ্যালোভেরার উপকারিতা বা রূপচর্চায় অ্যালোভেরার ব্যবহার গুলোর মধ্যে একটি।
আলার্জি সমস্যা দূর করে: আপনি যদি আলার্জির মতো জটিল সমস্যায় ভুগে থাকেন, তাহলে নিয়মিত ত্বকে অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করতে পারেন। কেননা অ্যালোভেরাতে থাকা পুষ্টি উপাদান আমাদের ত্বকের আলার্জি দূর করতে সহায়তা করে থাকে। যার ফলে আলার্জি মতো সমস্যা সহজেই দূর হয়।
সুতরাং আপনি যদি আপনার ত্বকের আলার্জি দূর করতে চান, তাহলে নিয়মিত অ্যালোভেরার জেল ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন এবং সেই সাথে এই অ্যালোভেরার জুস পান করতেও পারেন। এতে করে দ্রুত ফলাফল পাবেন।
ক্ষত সারাতে: ছোট খাটো কাটা বা ক্ষত সারাতে অ্যালোভেরা জেলের জুড়ি নেই। সুতরাং আপনি চাইলে ছোট খাটো কাটা-ফাটা বা ক্ষত সারাতে এই অ্যালোভেরার জেল ব্যবহার করতে পারেন।
ত্বকের কালো দাগ দূর করে: আমরা তো সবাই চাই আমাদের ত্বক ফর্সা, উজ্জ্বল, মসৃণ ও সতেজ হোক কিন্তু বিভিন্ন কারনে আমাদের ত্বকের রঙ কালচে হয়ে যায়। যা মোটেও কাম্য নয়। এসব ত্বকের বা শরীরের যেসব স্থানে কালো দাগ রয়েছে, এই কালো দাগ দূর করতে অ্যালোভেরার অনেক কার্যকারী ভূমিকা পালন করে থাকে।
সুতরাং আপনি যদি আপনার ত্বকের কালচে রঙ দূর করতে চান, তাহলে প্রতিদিন গোসলের আগে ত্বকের কালো স্থানে অ্যালোভেরার দিয়ে কিছুক্ষন ম্যাসাজ করে রেখেদিন তারপরে ধুয়ে ফেলুন। এতে করে দ্রুতই কালো দাগ দূর হয়ে যাবে।
ত্বকের মৃত কোষ দূর করে: আমাদের ত্বকের কোষ বিভিন্ন কারনে মরে যায়, যার ফলে ত্বক দেখতে বাজে লাগে। কিন্তু অ্যালোভেরাতে থাকা পুষ্টিগুণ ত্বকের এসব মৃত কোষ দূর করতে সহায়তা করে থাকে। সুতরাং ত্বকের মৃত কোষ দ্রুত দূর করতে চাইলে নিয়োমিত অ্যালোভেরা জেলের ব্যাবহারের করতে পারেন।
ত্বক মসৃন করে: আপনি যদি আপনার ত্বকের খসখসে ভাব দূর করে ত্বক মসৃণ করতে চান, তাহলে নিয়োমিত অ্যালোভেরা জেল ব্যাবহার করতে পারেন। এতে করে আপনার ত্বকের সকল মৃত কোষ দূর করে এবং যাবতীয় ত্বকের ময়লা দূর করে করে ত্বককে করে তুলবে আরও বেশি মসৃণ ও আর্কষণীয়।
চুলের যত্নে অ্যালোভেরার উপকারিতা
চুল পড়া বন্ধ করে: আপনার যদি প্রতিনিয়ত চুল ঝরে থাকে, তাহলে এই অ্যালোভেরার জেল ব্যবহার করতে পারেন। কেননা অ্যালোভেরাতে থাকা পুষ্টি উপাদান আপনার চুলের গোড়া শক্ত করবে ফলে দ্রুতই চুল পড়া বন্ধ হয়ে যাবে এবং সেই সাথে নতুন চুল গজাতেও সাহায্য করবে।
সুতরাং আপনি যদি আপনার চুল অকালে ঝরে পড়া রোধ করতে চান, তাহলে অবশ্যই নিয়মিত এই অ্যালোভেরার জেল চুলে লাগাতে পারেন এবং সেই সাথে এই অ্যালোভেরার জুস পানও করতে পারেন। এতে করে দ্রুত ফলাফল পাবেন।
খুশকি দূর করে: খুশকির সমস্যা খুবই বিরক্তিকর একটি সমস্যা। আপনার মাথায় যদি অতিরিক্ত খুশকি থাকে তাহলে নিয়োমিত কিছুদিন অ্যালোভেরার জেল ব্যবহার করতে পারেন। কেননা নিয়মিত কিছুদিন অ্যালোভেরার জেল ব্যবহার করলে অ্যালোভেরাতে থাকা উপাদান খুশকি দূর করতে সাহায্য করবে।
চুল সিল্কি করে: আপনি যদি আপনার প্রিয় চুল সিল্কি করতে চান তাহলে নিয়োমিত অ্যালোভেরার জেল চুলে ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে আপনার চুল দ্রুতই সিল্কি হয়ে যাবে।
চুল ফাঁটা রোধ করে: আপনি যদি চুলের আগা বা গোড়া পেটে বা চুল ঝরে পড়ার মতো সমস্যায় ভুগে থাকেন, তাহলে নিয়মিত প্রতিদিন গোসলের আগে অ্যালোভেরার জেল মাথায় ১ এক ঘণ্টার মতো অপেক্ষা করতে হবে। এতে করে দ্রুতই চুল ফাঁটা সমস্যা দূর হয়ে যাবে। এগুলোই চুলের যত্নে অ্যালোভেরার উপকারিতা।
অ্যালোভেরা খাওয়ার নিয়ম
অ্যালোভেরা খাওয়ার জন্য প্রথমে আপনাকে অ্যালোভেরার গাছ থেকে একটি ডাল কেটে নিতে হবে। তারপরে ডালটি ভালোমতো কেটে ভিতর থেকে জেল গুলো বের করে নিতে হবে। তারপরে জেলগুলো একটি গ্ল্যাসে নিয়ে পরিমান মতো পানি দিয়ে তারপর ভালোমতো মিশ্রণ করতে হবে। এগুলোই অ্যালোভেরা খাওয়ার নিয়ম।
এছাড়া আপনি চাইলে অ্যালোভেরা জেল ও পানি ব্লেন্ডারের মাধ্যমে মিশ্রণ করে নিতে পারেন। অ্যালোভেরা জেল যেহেতু অনেক তিতা তাই আপনি চাইলে এক চা চামচ পরিমাণ মধু ও এক চা চামচ পরিমাণ লেবুর দিয়ে ভালোভাবে মিশ্রণ করে তারপরে পান করতে পারেন। সপ্তাহে ৩-৪ দিনের বেশি অ্যালোভেরা জুস পান করা উচিৎ নয়।
বিঃদ্রঃ গর্ভবতী এবং স্তন্যপান করানো মায়েরা অ্যালোভেরার জুস কখনো পান করবেন না। এতে করে বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে।
অ্যালোভেরা খাওয়ার অপকারিতা
- অতিরিক্ত অ্যালোভেরার জুস পান করলে ডায়রিয়া হতে পারে।
- অতিরিক্ত অ্যালোভেরার জুস পান করলে কিডনির সমস্যাও হতে পারে।
- অতিরিক্ত অ্যালোভেরার জুস পান করলে পেশি দুর্বল হয়ে যায়।
- অতিরিক্ত অ্যালোভেরার জুস পান করলে হৃদ রোগের বা হার্টের সমস্যা হতে পারে।
- এগুলোই অ্যালোভেরা খাওয়ার অপকারিতা এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে।
লেখকের মন্তব্য
প্রিয় পাঠক, আজকের আর্টিকেলে পুরুষদের জন্য অ্যালোভেরার উপকারিতা সম্পর্কে ইতিমধ্যে সকল তথ্য জেনেছেন। সেই সাথে আর্টিকেলে বর্ণিত বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে বলা যায় যে, অ্যালোভেরা নানা গুনে ভরপুর। তাই নিয়মিত অর্গানি বা অ্যালোভেরা গাছ থেকে অ্যালোভেরা সংগ্রহ করে ব্যবহার করুন।
আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ রূপে ধৈর্য সহকারে পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আজকের আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে যদি আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন, তাহলে অনুগ্রহ করে পরিচিতদের মাঝে শেয়ার করে দিবেন। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের তথ্য পেতে আমাদের ওয়েব সাইট www.kanon24.com নিয়মিত ভিজিট করুন। ধন্যবাদ।
কানন২৪ এর নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন।প্রতিটি মন্তব্যের জবাব দেওয়া হয়;
comment url